নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে দিল্লির তিনমূর্তি ভবন চত্বরে জওহরলালের পাশাপাশি দেশের সব প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
মৃত্যুর আগে ষোলো বছর দিল্লির তিনমূর্তি ভবনে কাটিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তার পরে কংগ্রেস জমানায় ভবনটিকে নেহরু স্মারক সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার তৈরি করা হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে সেই ভবন চত্বরে জওহরলালের পাশাপাশি দেশের সব প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মোদী সরকার এ বারে তা থেকে বাদ দিল কংগ্রেসের সব সদস্যকে।
কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনেই স্বশাসিত সংস্থা নেহরু সংগ্রহশালা। নেহরুর জীবন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় সংরক্ষণ করাই এর প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু কথায় কথায় যাবতীয় দোষ নেহরুর উপরেই চাপান যে নরেন্দ্র মোদী, তাঁর সরকার নেহরুর ঐতিহ্য ধরে রাখা নেতাদের সরালেন! এই প্রশ্নেই আজ দিনভর ঝড় উঠল রাজধানীতে।
মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে ভেঙ্গে ফেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন কর্ণ সিংহ, মল্লিকার্জুন খড়্গে, জয়রাম রমেশ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন কমিটিতে আছেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ। আছেন প্রসূন জোশী, প্রধানমন্ত্রীর উপর বইয়ের লেখক কিশোর মাকওয়ানাও। ৩৪ জনের কমিটি কমিয়ে ২৮ জনের করা হয়েছে।
দিল্লির তিনমূর্তি ভবন
• রাষ্ট্রপতি ভবনের দক্ষিণ প্রান্তে ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লাটিয়েন্সের ভাবনায় ১৯২৯-৩০ সালে তৈরি তিনমূর্তি ভবন। স্বাধীনতার আগে ছিল বিট্রিশ ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’-এর বাসভবন
• ১৯৪৮-এ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। ১৯৬৪-র ২৭ মে মৃত্যু পর্যন্ত ১৬ বছর এখানেই কাটিয়েছেন জওহরলাল নেহরু। এর পরেই ভারত সরকার ভবনটিতে নেহরুর নামে সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার করে
• স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ১৯৬৬ সালে একটি ‘সোস্যাইটি’ গড়া হয়। লক্ষ্য ছিল, নেহরুর ব্যক্তিত্ব, স্মারক ও জীবন সংক্রান্ত সংগ্রহশালা তৈরি, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নেহরুর ব্যক্তিগত নানা নথির সংরক্ষণ
• সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে এই স্বশাসিত সংস্থার খরচ বহন করে কেন্দ্রই। কমিটির সদস্য বাছাইয়ের অধিকারও তাদের হাতে। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর সংস্থার কার্যকরী পরিষদ আইন বদলায়। বদল হয় কাজের কাঠামোতেও
• কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংশোধনী পাশ হয়। তিনমূর্তি ভবন চত্বরে এখন নেহরুর পাশাপাশি সব প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালা হবে। এ বার কংগ্রেস সদস্যদের বাদ দেওয়া হল কমিটি থেকে
কর্ণ সিংহ বললেন, ‘‘যাঁরা নেহরুর নাম নিতে দ্বিধা করেন, তাঁরা আজ এই সংস্থার দখল নিচ্ছেন। আর যাঁরা নেহরুর মূল্যবোধ নিয়ে চলেন, তাঁদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সরকার নিজের সঙ্কীর্ণ মানসিকতারই পরিচয় দিল।’’
আরও পড়ুন: বছরে ১২ লক্ষ বায়ুদূষণের বলি, বলছে রিপোর্ট
একই সুরে খড়্গে, অশোক গহলৌতদের মতো কংগ্রেস নেতারাও বলেন, ‘‘সরকার শুধু রাজনীতি করতেই জানে। শুধু নিজেদের লোককে বসানোর মতলব। উদার স্বর রোধ করাই তাঁদের লক্ষ্য!’’
বিজেপির তরফে অমিত মালব্য প্রথমে নিশানা করেন কর্ণ সিংহকে। বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকারে সব পদে মেয়াদ পূর্ণ করেছেন কর্ণ সিংহ। তিনি আরও উদার বক্তব্য রাখতে পারতেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের
আচার্য, আইসিসিআর-এর সভাপতি, নেহরু সংগ্রহশালায় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে মেয়াদ শেষ করেছেন। শুধু তাই নয়, অরোভিল ফাউন্ডেশনে মোদী জমানাতেই নতুন করে নিযুক্ত হয়েছেন, যেটি ক্যাবিনেট স্তরের পদ।’’
বিজেপির সাফ কথা, সব কিছু নেহরু-গাঁধী পরিবারের মনমাফিক হতে পারে না। এর আগে জালিওয়ানাবাগ জাতীয় স্মারক পরিচালনা ট্রাস্টেও বহু দিন ধরে দলের সভাপতিকে রেখে দিয়েছিল কংগ্রেস। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়ারম্যান থাকলেও নির্ধারক শক্তি ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। নেহরু স্মারকেও শীর্ষে ছিলেন সনিয়া গাঁধী। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি পদত্যাগ করেন।
সরকারের যে সংস্কৃতি মন্ত্রক এই নতুন কমিটির নির্দেশ জারি করেছে, তার মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেলও আজ বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বোঝা উচিত, এটি আর শুধু নেহরু স্মারক নয়। এটি সব প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরই সংগ্রহশালা হয়েছে। সবাই কংগ্রেসের নয়। সব দিক বিবেচনা করেই নতুনদের নেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ, এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীও প্রধানমন্ত্রী হলেও কখনও এমন দখলদারি মানসিকতা দেখাননি। নরেন্দ্র মোদী এসেই এটি কব্জা করতে উঠেপড়ে লাগেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংস্থার আইন বদলে নতুন সংগ্রহশালার কাজও চলছে পুরোদমে। বিজেপি বলছে, বিবেক দেবরায়, এন আর নারায়ণমূর্তি বা এম জে আকবরকে রাখা হয়নি নতুন কমিটিতে। সে সব নিয়ে একটি কথা তো নেই কংগ্রেসের!