নরেন্দ্র মোদী।—ছবি রয়টার্স।
দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের দু’দিনের ধর্মঘট নিয়ে নীরব থাকার নীতি নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। মুখে কিছু না বললেও মোদী সরকারের মন্ত্রীদের যুক্তি— শ্রম আইন সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ট্রেড ইউনিয়নগুলি ধর্মঘটে নামছে বটে। কিন্তু বাস্তব হল, শ্রম আইনে সংস্কার কার্যত শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। গোটা দশেক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছিল। তা-ও এগোয়নি।
আজ ধর্মঘটী ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা দিল্লিতে ঘোষণা করেন, ২০ কোটির বেশি শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেবেন। ব্যাঙ্ক, বিমা, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ, ইস্পাত, ডাক, টেলিযোগাযোগ, পরিবহণ ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেবেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা রাস্তা রোকো, রেল রোকো কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। তবে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া কাজ চালু রাখতে পারে বলে খবর।
মোদী সরকারের তরফে ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বানও জানানো হয়নি। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কৌর বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরেই আমরা ধর্মঘটের ঘোষণা করেছি। ২০ ডিসেম্বর নিয়ম মাফিক বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘটের নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি।’’ তাঁর অভিযোগ, শ্রম আইনে সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য কেন্দ্রের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকগুলিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলি বিরোধিতা করলেও তা বৈঠকের কার্যবিবরণীতে যোগ করা হত না। তাই গত জুলাই থেকে ট্রেড ইউনিয়নগুলি বৈঠক বয়কট করা শুরু করে। তাতেও সরকারের হেলদোল নেই।
আরও পড়ুন: মমতার ধর্মঘট-বিরোধিতায় আস্থা দিলীপেরও, প্রস্তুত বামেরা
পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু সরকার ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দিল্লির উপ-রাজ্যপালও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের কর্মীদের ধর্মঘটে যোগদান রুখতে এসমা জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির মধ্যে একমাত্র সঙ্ঘ-পরিবারের বিএমএস এই ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছে না। বিএমএস নেতা ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের যুক্তি, এই ধর্মঘট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তা নিয়ে অবশ্য বাকি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের লুকোছাপা নেই। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে এই ধর্মঘট মোদী সরকারকে গদি থেকে ধাক্কা দেবে। বিএমএস নেতাদের যুক্তি, সরকার ৪৪টি শ্রম আইন একত্র করে চারটি শ্রমবিধি চালুর কথা বলেছিল। তার পরে আর এগোতে পারেনি। তা-ও ধর্মঘট হচ্ছে। অমরজিতের অভিযোগ, ‘‘সরকার নিজের দালাল ইউনিয়নকে দিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে।’’
প্রশ্ন হল, মোদী সরকার যদি শ্রমিক সংগঠনগুলির ধর্মঘটে নিরুত্তাপই থাকে, তা হলে ধর্মঘটে লাভ কী হবে?
সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলনের চাপেই সরকার নিজেদের শ্রমিক-বিরোধী কর্মসূচির অনেকখানি কার্যকর করতে পারেনি।’’ তাঁর যুক্তি, শ্রমিক-কর্মচারীদের বিরোধিতার কারণেই প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর বসিয়ে, রুগ্ন ব্যাঙ্ক বাঁচাতে আমজনতার আমানতে হাত দেওয়ার জন্য বিল এনেও সরকার পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।