Narendra Modi

ভরসা কোথায়, চিন-নীতি নিয়ে প্রশ্ন

দু’দিন আগে লোকসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন তারিখ ধরে ধরে  ভারত-চিন সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৫
Share:

ছবি: পিটিআই।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ইউপিএ জমানায় তাঁর মুখ থেকে কোনও শব্দ বেরোনো ছিল এক দুর্লভ ঘটনা। বিরোধী নেতা হিসেবেও বিশেষ হাঁকডাকের মানুষ নন তিনি। কিন্তু গতকাল রাজ্যসভায় নিজের মেজাজের বিপরীতে গিয়ে এ কে অ্যান্টনি কিছুটা ঝাঁঝালো ভাবেই জানতে চাইলেন— ‘‘সবই তো হল, কিন্তু চিন আমাদের ভূখণ্ড ছেড়ে ফিরবে কবে? ভারতের পুরনো টহলদারির জমি কী ভাবে ফেরত পাওয়া যাবে?’’ পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর খোঁচা, ‘‘চিনকে এত ভয় কেন?’’

Advertisement

চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে মস্কোর মাটিতে সাম্প্রতিক জোড়া বৈঠকের (বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক স্তরের) পরেও কিন্তু এখনও সরকারের পক্ষ থেকে উপরোক্ত প্রশ্নগুলির কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না— এমনটাই দাবি রাজনৈতিক শিবিরের।

দু’দিন আগে লোকসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন তারিখ ধরে ধরে ভারত-চিন সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে আগাগোড়া কোথাও বলা হয়নি, ভারতীয় ভূখণ্ডের কতটা লাল ফৌজ দখল করে রেখেছে, ভারত কতটা জমিতে টহল দেওয়ার অধিকার হারিয়েছে এবং চিনা সেনাকে ফেরানোর জন্য ভারত কী পদক্ষেপ করছে। বরং সেখানে বলা হয়েছে, চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ঢুকতে গেলে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তাদের আটকাতেই ১৫ জুনের রক্তপাত ঘটে। রাজনাথ সিংহ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় তাঁর বক্তৃতায় চিনকে আক্রমণ করে চিনা সেনার হিংসাত্মক আচরণের কথা বলেছেন। কিন্তু ভারতীয় ভূখণ্ডের দখল বজায় রেখে ‘নতুন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ’ (মস্কো বৈঠকে যে ব্যাপারে একমত হয়েছেন ভারত এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই) করায় বিপদ আসলে বাড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে দেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: দুই নরেনকে মিশিয়ে মাত্রা ছাড়াল স্তুতি

আরও পড়ুন: চাষিদের থেকে সরকার আর ধান-গম কিনবে না, এটা মনগড়া কাহিনি: মোদী​

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে নতুন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করা মানে চিনকে আরও গেড়ে বসার সুযোগ করে দেওয়া। অতীতের সমস্ত সীমান্ত প্রোটোকল এবং চুক্তি যে চিন নিজের সুবিধামতো নস্যাৎ করেছে, সেটা সংসদের অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে আবার কীসের নতুন আস্থা বর্ধন? সূত্রের মতে, যে কোনও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে চিন বরাবরই সময় ব্যয় করে, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কূট কৌশলে সময় কিনে নিতে চায়। আর ওই সময়ের মধ্যে মাপতে থাকে প্রতিপক্ষের কৌশল, পাল্টা প্রতিঘাতের মাত্রা। যে সামান্য ভূখণ্ড তারা দখলে এনেছে, ওই সময়ের মধ্যে, তাতে পাকা সিলমোহর লাগানো অথবা সেখানে পোস্ট পুঁতে ফিরে গিয়ে সীমান্তের রূপরেখা বদল করার কৌশল চিন বারবার বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই নিয়েছে — এমনটাই মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রেও চিন যদি সেটা করে থাকে, তা হলে, তা নিয়ে ঢাকঢাক গুড়গুড় না করে গোটা দেশকে এক সঙ্গে নেওযাটা জরুরি ছিল মোদী সরকারের।

মস্কো বৈঠকের পরে চিনের বিদেশমন্ত্রী দাবি করেন, দু’দেশই বর্তমান অবস্থান থেকে অর্ধেকটা পিছোনোর ব্যাপারে একমত হয়েছে। অর্থাৎ চিন যদি দশ কিলোমিটার ভিতরে এসে থাকে, তা হলে তারা ৫ কিলোমিটার পিছিয়ে যেতে রাজি। সে ক্ষেত্রেও পাঁচ কিলোমিটার তাদের দখলে থেকে যাচ্ছে! কংগ্রেস নেতৃত্বর প্রশ্ন, এই সহজ হিসেবটা কেন সর্বসমক্ষে স্বীকার করছে না মোদী সরকার?

আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল একত্রে বৈঠক করেছেন চিন নিয়ে। এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেজিং-এর সঙ্গে দরকষাকষির কৌশল কী হবে, তা স্থির করতেই এই বৈঠক। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই সেনা কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে দু’দেশের মধ্যে। সূত্রের খবর, প্যাংগং লেক এবং গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনাকে ব্যস্ত রেখে চিনা সেনা কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লাদাখের দেপসাং উপত্যকায় অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে— এমন আশঙ্কা করছে সাউথ ব্লক। বিষয়টি আজকের বৈঠকেও উঠে এসেছে বলে খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement