নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
ক্ষমতায় এসে কড়া আর্থিক সংস্কারের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যোজনা কমিশন ভেঙে তৈরি নীতি আয়োগের মাথায় এনেছিলেন জগদীশ ভগবতীর শিষ্য অরবিন্দ পানাগড়িয়াকে। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়েছিল অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে।
দুই অরবিন্দই বিদায় নিয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছেড়ে গিয়েছেন রঘুরাম রাজন। এ বার সেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এস গুরুমূর্তি ও সতীশ মরাঠেকে নিয়োগ করে মোদী আসলে সঙ্ঘের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন, মনে করছে বিজেপিরই একাংশ। তাঁদের কথায়, এত দিন মূলত শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই সঙ্ঘের লোকেদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছিল। এ বার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সঙ্ঘ-অনুগতরা ঢুকে পড়লেন।
কংগ্রেস আজ প্রশ্ন তুলেছে, সঙ্ঘ পরিবার কি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে? কিন্তু বিজেপি শিবিরের অন্দরের সমীকরণ বলছে, এ’টি আসলে চাকরির অভাব, কৃষকদের অসন্তোষ, দলিত বিক্ষোভ নিয়ে চাপে থাকা মোদীর সঙ্ঘ পরিবারের বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া। পেশাদার অর্থনীতিবিদদের বিদায় দিয়ে, আর্থিক উদারীকরণ শিকেয় তুলে, রক্ষণশীল সঙ্ঘপন্থীদের এনে আর্থিক নীতির ‘স্বদেশিকরণ’।
বিজেপি সূত্র বলছে, অর্থ মন্ত্রকে ফিরে আসার মুখে অরুণ জেটলির কাছেও এ’টি সুখবর নয়। কারণ গুরুমূর্তির সঙ্গে জেটলির অহি-নকুল সম্পর্ক। মোদীর নোট বাতিলকে জোর গলায় সমর্থন করেছিলেন গুরুমূর্তি। নোট বাতিলকে ১৯৯১-এর আর্থিক সংস্কারের সঙ্গে এক আসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু পানাগড়িয়া, সুব্রহ্মণ্যনের মতো ‘বিদেশ থেকে আমদানি’ অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করেছেন তিনি ও তাঁর স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। মরাঠে এবিভিপি-র প্রাক্তন নেতা। পরে সমবায় আন্দোলনে ‘সহকার ভারতী’ নামে যে সংস্থার প্রধান হন, সেটিও সঙ্ঘের অনুগামী।
প্রশ্ন হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘গৈরিকীকরণ’-এ আর্থিক নীতিতে কী প্রভাব পড়বে? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ড সুদ নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয় না। কিন্তু সেখানে নীতিগত আলোচনা হয়। বিশেষত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডিভিডেন্ড নীতি বোর্ড ঠিক করে। গুরুমূর্তি সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেশীয় ব্যবসা ধ্বংস করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। তাঁর যুক্তি ছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ভারত ও ভারতীয়দের জন্য কাজ করতে হবে। বাসেল-নীতি মেনে ব্যাঙ্কের পুঁজি জোগানোর মাপকাঠি ঠিক করার দরকার নেই। আন্তর্জাতিক নিয়মে প্রভাবিত হওয়ার দরকার নেই।
এখানেই বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, গুরুমূর্তিরা এই সব ভাবনা বোর্ডে তুলবেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে কম পুঁজি রেখে সরকারকে বেশি ডিভিডেন্ড দেওয়ার কথাও বলতে পারেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই প্রথম অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি বা প্রবীণ আমলাদের বদলে একেবারে সরাসরি রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকেদের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডে বসানো হল। বোর্ডে গভর্নর ও চার ডেপুটি গভর্নর ছাড়া, ১০ জন সরকার মনোনীত ডিরেক্টর রয়েছেন। অতীতে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন, মাহিন্দ্রা মাহিন্দ্রার প্রাক্তন কর্তা ভারত দোশী, শিল্পপতি মনীশ সাবরওয়াল, অশোক গুলাটি, নচিকেত মোরের মতো অর্থনীতিবিদদের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডে নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিল মোদী সরকার।
ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।