শ্যাম রাও শিরকে।
উনুনের উপরে প্রকাণ্ড ডেকচিতে সেদ্ধ হচ্ছে ঘাস। পাশের বারান্দায় রাখা হারমোনিয়াম থেকে একটি রবারের নল এসে ঢুকে গিয়েছে ডেকচির ভিতরে। হারমোনিয়ামের বেলো টিপলে রবারের নল দিয়ে হাওয়া এসে সবুজ ঘাস হাইড্রোলাইজ় হয়ে কার্বোহাইড্রেট হবে। তাতে দু’টো অ্যামিনো-গ্রুপ জুড়ে দিলেই ব্যস!
পৃথিবীতে অন্নাভাব মেটাতে প্রফেসর ননীর সেই উদ্যোগ কতটা সফল হয়েছিল, ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্পে তা লিখে যাননি পরশুরাম!
কবে কেটে গিয়েছে পরশুরামের সেই কাল!
মূল্যবৃদ্ধি-বেকারিতে নাজেহাল মানুষ-দেশ-সরকার। তার মধ্যেই যেন প্রফেসর ননী হয়ে সামনে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! দেশের মানুষ নিজেদের রোজগারক্ষম করে তুলতে কী ভাবে অভিনব পথ নিচ্ছেন, তা সম্প্রতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা করতে গিয়েই গত সপ্তাহে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি শুনিয়েছেন ‘আর এক’ চা-ওয়ালার গল্প।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘চা-ওয়ালার কথা শুনলেই আমার নজর আবার তাড়াতাড়ি যায়। কোনও এক ছোট শহরে দুর্গন্ধে ভরা নর্দমার পাশে এক জন চা বানান। কিন্তু তাঁর মগজে নতুন ভাবনা এল। দুর্গন্ধে ভরা নর্দমা থেকে গ্যাস বেরোয়। সেখানে একটি বাটি উল্টো করে লাগিয়ে তাতে ফুটো করে একটি পাইপ লাগিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে সোজা চায়ের ঠেলাগাড়িতে। তাতেই চা বানান। কী প্রযুক্তি!’’
জ্বালানি তৈরির সম্ভবত সহজতম উপায়। ঘাস হাইড্রোলাইজ় হওয়ার মতো জটিল মোটেই নয়।
কিন্তু সেটা বুঝলে তো! এমনিতেই গত সাড়ে চার বছরের বেকারি-দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধির দাপটে নাকাল আমজনতা। মোদী গত লোকসভা ভোটের আগে কী বলেছিলেন আর বাস্তবে কী হয়েছে—এই হিসেব চেয়ে রোজই ঝড় তুলছেন বিরোধীরা। হিসেব মেলাতে গিয়ে মোদী কখনও পকোড়া ভাজাকে কর্মসংস্থান
বলছেন। কখনও বলছেন, চাকরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিসেবটা নেই! তার মধ্যেই মোদীর এই অভিনব জ্বালানি-তত্ত্ব শুনে আসরে নেমে পড়েছেন রাহুল গাঁধী।
রাহুল বলেছেন, ‘‘মোদীর নতুন রোজগারের কৌশল! নর্দমার পাশে বসে পাইপ লাগিয়ে সোজা ধাবাতে পকোড়া বানান! প্রধানমন্ত্রী ২ কোটি রোজগার দেবেন না, গ্যাসও দেবেন না। গ্যাসটিও এখন নর্দমা থেকে নিতে হবে!’’ রাহুলের হামলায় গত দু’দিন ধরেই বেসামাল বিজেপি। রাত পোহালে লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। তার আগে এ কী গেরো!
অবশেষে খুঁজে পাওয়া যায় এক জনকে। ছত্তীসগঢ়ের শ্যাম রাও শিরকে। নর্দমা থেকে জল তুলে সেই জল বড় ড্রামে ভরে গ্যাস হোল্ডার বানিয়ে তাতে চা বানিয়েছেন তিনি। রান্নাও করেছেন। ব্যস! খোঁজ মিলতেই তড়িঘড়ি তাঁকে সামনে রেখে প্রচার শুরু হল। কাজে লাগানো হল কিছু সংবাদমাধ্যমকেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিরকের জয়ধ্বনি উঠল। বলা হল, ‘‘এই দেখুন, এই সেই ব্যক্তি যিনি নর্দমার গ্যাস থেকে চা বানান। তাঁর প্রযুক্তির পেটেন্টও করেছেন।’’
কিন্তু এই প্রচারের মধ্যেও যে বিপত্তি! নর্দমার গ্যাস থেকে রান্না করার কথা মেনেও শিরকে বললেন, পুরসভা তাঁর যাবতীয় যন্ত্রপাতি ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেছে, এ সব আবর্জনা! বিজেপি-শাসিত ছত্তীসগঢ়েই এমন ঘটনায় বেশ মুখ পুড়েছে দলের। তার উপর সামনেই সেখানে বিধানসভা ভোট। শিরকে আজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘দু’বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। আমার আর্থিক সাহায্য দরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রীই যখন আমার কথা বলেছেন, তিনিই সুরাহা করুন।’’