জলে-জমিতে আগ্রাসন, মোদী জাপানে বসেই বিঁধলেন চিনকে

জাপান সফরে গিয়ে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই চিন সম্পর্কে মন্তব্য করে আলোড়ন ফেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টোকিওতে পৌঁছে ভারত- জাপান বাণিজ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যেই মোদী এ দিন টেনে এনেছেন চিনের আগ্রাসী মনোভাবের কথা। বিশেষ কোনও দেশের নাম না করেই মোদী বলেছেন, কোনও কোনও দেশের অষ্টাদশ শতকের মানসিকতা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

চায়ে পে চর্চা। প্রথা মেনে চা-কেক চাখলেন মোদী। সঙ্গে শিনজো আবে (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স

জাপান সফরে গিয়ে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই চিন সম্পর্কে মন্তব্য করে আলোড়ন ফেলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

টোকিওতে পৌঁছে ভারত- জাপান বাণিজ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যেই মোদী এ দিন টেনে এনেছেন চিনের আগ্রাসী মনোভাবের কথা। বিশেষ কোনও দেশের নাম না করেই মোদী বলেছেন, “কোনও কোনও দেশের অষ্টাদশ শতকের মানসিকতা রয়েছে। অন্যের জমি দখল আর সমুদ্রের অধিকার নিতে আগ্রাসী মনোভাব দেখায় তারা।” এর সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “সবাই বলে একবিংশ শতাব্দী হবে এশিয়ার। তবে ভারত আর জাপানের সম্পর্ক কতটা দৃঢ় হবে, তার উপরেই সব সাফল্য নির্ভর করবে।” এক দিকে অরুণাচল নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের সংঘাত, অন্য দিকে পূর্ব চিন সাগরে গ্যাসের উত্তোলন নিয়ে চিন ও জাপানের বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই মোদীর আজকের মন্তব্যকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। চিনকে নিশানা করে মোদী বলেছেন, আমাদের বেছে নিতে হবে আমরা ‘বিকাশ বাদ’ নাকি ‘বিস্তার বাদ’-এর কথা ভাবব। যারা বুদ্ধের রাস্তায় চলেন, তাঁদের বিশ্বাস বিকাশের কাজে। আর অন্যের জমি আর সমুদ্রের অধিকার নিয়ে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে কেউ কেউ ‘বিস্তার বাদ’- এ বিশ্বাস রাখেন।

জাপান সফরের ভিতরে প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ এমন মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন তুলেছে। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চিনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের নয়াদিল্লি সফর করার কথা। তার আগে বিদেশের মাটিতে বসে মোদী এমন কথা বললেন কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী সরকার জাপান ও চিনের ভিতরে ভারসাম্য রেখেই চলতে চায়। দেশের উন্নয়নে জাপানি বিনিয়োগের বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাইছেন মোদী। একই সঙ্গে চিনের বিরাট বাজারের দিকেও লক্ষ্য রয়েছে তাঁর। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে সে দেশে পাঠিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে নির্মলা চিনে রয়েছেন। দু’দেশের বাণিজ্যের রাস্তা প্রশস্ত করতে সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। আবার এই সময়েই জাপানে গিয়ে মোদী চিন সম্পর্কে অনেকটাই কট্টরবাদী অবস্থান নিলেন। এ নিয়ে মোদীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, যে কোনও দেশের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী সুসম্পর্ক চান। কিন্তু মাথা নিচু করে সম্পর্ক স্থাপন করতে রাজি নন তিনি। তাই অরুণাচলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা সেনার আগ্রাসী মনোভাবের নিয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়েই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তিনি। জাপানেও চিনের নাম না করে আগ্রাসী মানসিকতার কথা তুলে ধরলেন মোদী।

Advertisement

যদিও বিদেশের মাটিতে কেন তৃতীয় কোনও দেশ সম্পর্কে বলতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কূটনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, জাপানের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই। আর ভারত ও জাপান দু’দেশের সঙ্গেই চিনের জমি ও সমুদ্রের অধিকার নিয়ে সংঘাত রয়েছে। ফলে আজকের মন্তব্যের পিছনে আবেগ কাজ করেছে। তবে মোদীর মন্তব্য নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিন। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র কিন গ্যাং মন্তব্য করেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও দেশের নাম করেননি। তাই আমরাও বুঝতে পারছি না উনি কাদের কথা বলতে চেয়েছেন।” এর সঙ্গেই চিন সম্পর্কে কিছু দিন আগে করা মোদীর মন্তব্যকে তুলে ধরেছেন তিনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে ভারত চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আগ্রহী। দুই পড়শির সম্পর্কের মধ্য দিয়েই গোটা বিশ্বে বিকাশের পথ প্রশস্ত হবে।” তবে চিনের সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ অভিযোগ করা হয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ভারত ও চিনের ভিতরের সম্পর্ককে নষ্ট করছেন।

এ দিকে, ১৯৯৮-এ পোখরানে পরমাণু শক্তির পরীক্ষার পরে ‘হ্যাল’- সহ যে ছ’টি ভারতীয় সংস্থাকে জাপান নিষিদ্ধ করেছিল, তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে জাপানের সংস্থাগুলির সঙ্গে তাদের যৌথ ভাবে কাজ করার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। তবে দু’দেশের ভিতরে অসামরিক পরমাণু চুক্তি যদিও এ বার স্বাক্ষরিত হয়নি। তবে এই বিষয়কে নিয়ে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে জোর দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement