বিজেপি নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা যখন সংসদ অচল করে রেখেছে, সেই সময় সরকারি ব্যবস্থার নিচু তলার দুর্নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী খতিয়ে দেখেছেন, সরকারের এক বছর কেটে গেলেও এখনও সেই দুর্নীতিতে যথেষ্ট লাগাম কষা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের মতে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে যে পরিমাণ দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে, সেটি ইউপিএ জমানার থেকেও বেশি। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে স্পষ্ট এই দুর্নীতিতে এখনও লাগাম কষা সম্ভব হয়নি। এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, সরকার ও প্রশাসনের অভিধান থেকে তিনি ‘দুর্নীতি’ শব্দটি মুছে দিয়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন।
প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ইউপিএ জমানায় ২০১৩ সালে যেখানে ৫৪২৩টি অভিযোগ এসেছিল, যা গত বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৯২তে। এ বছর জুন মাস পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে ২৩৫৭টি।
এ ভাবে চলতে থাকলে বছরের বাকি অর্ধেক সময়ে দুর্নীতির অঙ্ক টপকে যেতে পারে বিগত বছরগুলিকে। তবে সরকারের দাবি— অভিযোগ বাড়ার কারণটা ভিন্ন। এই সরকার দুর্নীতি রোধে অনেক বেশি সজাগ। তাই দুর্নীতির অভিযোগও যেমন সামনে আসছে, তেমনই এর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনার কে ভি চৌধুরী বলছেন, অতীতে মামলা নিষ্পত্তির জন্য অনেক বছর লেগে যেত। কিন্তু এখন দ্রুত সেগুলি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ— দুর্নীতি বড় আকার ধারণ করার আগেই সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। সম্প্রতি প্রায় জনা পঞ্চাশ ‘হুইস্ল ব্লোয়ারের’ কাছ থেকেও অভিযোগ জমা পড়েছে। দু’ হাজারের বেশি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ১০টি মন্ত্রকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে প্রায় দু’কোটি টাকা আদায়ও করা হয়েছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে অনেক সরকারি কাজকর্ম অনলাইন করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের এক শীর্ষ কর্তাই কবুল করছেন, অনলাইনের মাধ্যমে কাজে আরও গতি ও স্বচ্ছতা আসে বটে, কিন্তু প্রযুক্তির হেরফের করাও অসম্ভব নয়। সম্প্রতি এই প্রযুক্তির গরমিল করার কিছু দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ অবশ্য বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি রোধে সরকার বদ্ধপরিকর। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলছি। সরকারের দক্ষতা বাড়ানো ও দুর্নীতি রোধের জন্য আমরা অনেক পদক্ষেপ করছি। এ’টি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া।’’
মন্ত্রীর দাবি, ই-গভর্নেন্স আসার পর সরকারি কাজের প্রক্রিয়া আরও সরল হয়েছে। বিভিন্ন টেন্ডার ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও কেন্দ্রীয় নজরদারিতে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে সিবিআইয়ের মামলাগুলিকে ত্বরান্বিত করার জন্য ৯২টি অতিরিক্ত বিশেষ আদালত গঠন করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রের মতে, ইতিমধ্যেই চলতি বছরে ৮১৬টি মামলায় বড় জরিমানা করা হয়েছে। মামলার গুরুত্ব বুঝে ৭৭৫টিতে ছোট জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। আর ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর দাবি, সরকারের সক্রিয়তা বেড়েছে বলেই দুর্নীতির অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে।