ফিল্মি গানের লাইন কখনও এমনই লাগসই হয়ে যায় বাস্তবে! যেমন আজকের বিহার। গত বছর ‘থিম সং’টা যেন ছিল— ‘হাম ভি হ্যায় জোশ মে... বাতেঁ কর হোশ মে!’ আজ মনে হল, গান পাল্টেছে। সেটা এখন— ‘অগর তুম না হোতে!’
বারবার তা-ই তো বললেন নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমার। আজ প্রধানমন্ত্রীর বিহার সফরে কার্যত তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে রইলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী এক হেলিকপ্টারেও উড়লেন। বক্তৃতায় কখনও মোদীকে ধন্যবাদে ভরিয়ে দিলেন নীতীশ। কখনও মোদী বললেন, ‘‘এ সব নীতীশজি ছাড়া হতো না।’’ কে বলবে, বিধানসভা ভোটের প্রচারে নীতীশের ‘ডিএনএ’ তুলে মোদী খোঁচা দেওয়ায় তুমুল তরজা লেগে গিয়েছিল দুই নেতার!
ভোটের পরে আজই ছিল মোদীর প্রথম বিহার সফর। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান নীতীশ। প্রথমে পটনা হাইকোর্টের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি উৎসবে যোগ দেন দুই নেতা। বক্তৃতায় পরস্পরকে ধন্যবাদ দেন। তার পর একসঙ্গে হেলিকপ্টারে হাজিপুর। সেখানে গাঁধী সেতুর পাশেই ছিল রেল মন্ত্রকের অনুষ্ঠান-মঞ্চ। গঙ্গার উপরে দু’টি ‘রেল-কাম-রোড’ সেতু এবং আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে নীতীশ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। উত্তর ও দক্ষিণ বিহারের মধ্যে দু’টি সেতুর উদ্বোধন মুখের কথা নয়। অটলজির সময়ে আমি রেলমন্ত্রী ছিলাম। সে সময়ে সেতুগুলির কাজ শুরু হয়েছিল। আজ শেষ হল।’’
মোদীকে বারবার রাজ্যে আসতে অনুরোধ জানান নীতীশ। বলেন, ‘‘বিহারের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন অসম্ভব।’’ তাঁর বক্তৃতার মধ্যেই ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান ওঠে। হাত নেড়ে সেই উৎসাহীদের নিরস্ত করেন মোদীই। নিজের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নীতীশজি ছাড়া এ কাজ সম্ভব ছিল না। আমি কৃতজ্ঞ।’’
হাজিপুরের মঞ্চে দুই দুঁদে নেতাকে একটা সময়ে নিজেদের মধ্যে হাসিমুখে নিচু গলায় কথা বলতেও দেখা যায়। এই মৈত্রীর ছবিতে ভবিষ্যতের ছায়াও দেখেছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, ভোট অতীত। দুই প্রশাসকেরই এখন পরস্পরকে প্রয়োজন। নীতীশ চান মোদীর কাছ থেকে বিহারের জন্য যথাসম্ভব কেন্দ্রীয় সাহায্য আদায় করে নিতে। আর মোদীও দেখাতে চান, তিনিই ‘উন্নয়নের মুখ’ এবং কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্কের পক্ষপাতী। জেডিইউ শিবিরের একাংশের দাবি, বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে লালু প্রসাদের ইদানীং কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে নীতীশের।
‘তুমি না থাকলে’ তাই গবেষণার বিষয় বইকী!