ফাইল চিত্র
আগামী শুক্রবার প্রথম বার শীর্ষ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই একই দিনে রয়েছে ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াড-এর বৈঠক।
দেশে কোভিড সংক্রমণের পরে এই প্রথম এশিয়ার বাইরে পা রাখছেন মোদী। কোয়াড এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনেও বক্তৃতা দেবেন মোদী। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এমন একটি সময়ে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্বের ভূকৌশলগত পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। কাবুল তালিবানের দখলে যাওয়ার জেরে ভারত এবং প্রতিবেশী বলয়ে সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত হবে বলে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে চিনের সঙ্গে সংঘাতের বার্তা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরমাণু-চালিত ডুবোজাহাজ ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি করল ব্রিটেন ও আমেরিকা। যা ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের সঙ্গে টক্কর দিতে এক ধাপে অনেকটাই শক্তিশালী করল অস্ট্রেলিয়াকে। স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেজিং।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, মোদী-বাইডেন শীর্ষ বৈঠকে অগ্রাধিকার পাবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং চিনের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি থাকবে কোভিড পরিস্থিতি, প্রতিষেধকের যৌথ উৎপাদন, পরিবেশ উষ্ণায়নের মতো বিষয়গুলিও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের আগের দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে কথা বলবেন মোদী পৃথক পৃথক ভাবে।
সূত্রের খবর, আসন্ন বৈঠকে ভারত তার আশু উদ্বেগ এবং আশঙ্কার জায়গাগুলি নিয়ে স্পষ্ট ভাবে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করবে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার উপস্থিতি, প্রভাব এবং কার্যকারিতা অনেকটাই কমে গেল এটা ঠিক। কিন্তু সার্বিক ভাবে পাকিস্তান-চিন অক্ষকে প্রশমিত করতে আমেরিকার এখনও ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করে সাউথ ব্লক। বাইডেনের ভবিষ্যৎ পাক-নীতি কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতুহল এবং উদ্বেগ রয়েছে মোদী সরকারের। সে দেশকে এবং তাদের সামরিক বাহিনীকে পুঁজি জোগানোর বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা ও আমেরিকার প্রভাবযুক্ত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলি কী ভাবছে, সেটিও ভারতের ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এটাও হিসেবের মধ্যে রাখা হচ্ছে যে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী আমেরিকায় থাকবেন, সেই একই সময়ে সে দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য হাজির থাকবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। বাইডেনের সঙ্গে ইমরানও বৈঠক করতে পারেন।
পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারত এবং আমেরিকার যৌথ উদ্বেগের জায়গা চিন। কোয়াড বৈঠকে যে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা। বাইডেন সরকারের পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে যে তত্ত্বটি দেওয়া হচ্ছে, তা হল আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরে এ বার রণকৌশলগত ভাবে চিনের উপর নিজেদের পূর্ণ নজর দিতে পারবে ওয়াশিংটন। এবং সেই লক্ষ্যেই ব্রিটেনকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু-চালিত ডুবোজাহাজ ব্যবহারের চুক্তিও সেরে ফেলেছে তারা। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরে ব্রিটেন-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া এই নতুন অক্ষটি তৈরি হওয়ার ফলে কোয়াড কোনওভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল কিনা, কূটনৈতিক মহলে এই প্রশ্নটি উঠেছে। এ বিষয়টিও স্পষ্ট করবেন মোদী, বাইডেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে। সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক ভাবে অতি আগ্রাসী চিনের মোকাবিলা করতে এই দুটি অক্ষ একে অন্যের সঙ্গে সমঝোতা রেখে কাজ করবে না পৃথক ভাবে, এই নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যদিও এই দুইয়ের লক্ষ্যই চিনকে চাপে রেখে সমুদ্রপথকে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য আরও খুলে দেওয়া।
তবে ভারতের কাছে বিষয়টি অস্বস্তির কারণ ব্রিটেন-আমেরিকা–অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হওয়া এই ডুবোজাহাজ চুক্তিটির তীব্র বিরোধিতা করছে ফ্রান্স। তাদের বক্তব্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আচরণ করছেন। ফ্রান্সের এই ক্ষোভের কারণ তাদের সঙ্গে এই চুক্তি হওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ফ্রান্স ভারতের কৌশলগত মিত্র রাষ্ট্র।