কৃষক-বিরোধী হলে জমি বিল বদলাতে রাজি মোদী

বললেন প্রায় পঁচাত্তর মিনিট। কখনও বিনয়, কখন জুতসই সংস্কৃত উদ্ধৃতি, কখনও তীক্ষ্ন শ্লেষ এবং আগাগোড়া আত্মপ্রত্যয়। সংসদে আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতা দিতে গিয়ে রীতিমতো ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০
Share:

বললেন প্রায় পঁচাত্তর মিনিট। কখনও বিনয়, কখন জুতসই সংস্কৃত উদ্ধৃতি, কখনও তীক্ষ্ন শ্লেষ এবং আগাগোড়া আত্মপ্রত্যয়। সংসদে আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতা দিতে গিয়ে রীতিমতো ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার মধ্যেই স্পষ্ট দু’টি বার্তা তিনি দিলেন। এক, তিনি কৃষক-দরদি। বিরোধীরা যদি মনে করেন, নতুন জমি বিলে কৃষক-বিরোধী কোনও বিষয় রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা পরিবর্তনে তিনি রাজি। এবং দুই, তিনি সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী।

Advertisement

বক্তৃতার প্রায় গোড়াতেই মোদী যে বার্তাটি দেন তা হল কেন্দ্রে সরকার বদলালে প্রকল্পের নাম বদলাল কি না, সেটি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রশ্ন হল সমস্যার সমাধান হচ্ছে কি না। মোদী বলেন, “আপনারা বলছেন আমি ‘নির্মল গ্রাম’ প্রকল্পের নাম পাল্টে ‘স্বচ্ছ ভারত’ করেছি। তা হলে তো আমি বলতে পারি, সেই ১৯৯৯ সালেই অটলজি ‘পূর্ণ নিকাশি’ প্রকল্প শুরু করছিলেন।”

বস্তুত, এই সুরেই বারবার কংগ্রেসকে বিঁধেছেন মোদী। যে আক্রমণ তীব্রতম হয়েছে একশো দিনের কাজ (এমএনরেগা) নিয়ে। মোদীর কথায়, “আপনারা বলছেন আমি এমএনরেগা বন্ধ করে দেব! দয়া করে আমার রাজনৈতিক বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। আমি এমএনরেগা-কে জিইয়ে রাখব। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সকলকে দেখাব, স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও দেশের মানুষকে মাটি কেটে খেতে হচ্ছে। এটা তো কংগ্রেসের ব্যর্থতার প্রতীক!”

Advertisement

কৃষক ও গরিব মানুষের উন্নয়ন যে তাঁর অগ্রাধিকার, সে কথা আজ ঘুরে-ফিরেই বুঝিয়েছেন মোদী। আর সেই সূত্রে জমি বিল নিয়েও কংগ্রেসকে মোক্ষম খোঁচা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপর্যয়ই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কৃষকেরা তাদের জমি বিলকে গ্রহণ করেননি। তাঁর কথায়, “স্বাধীনতার পরেও ৬০ বছর ধরে ১৮৯৪ সালে তৈরি একটা আইন মেনে চলতে হয়েছে কৃষকদের। আজ তাঁরা কাকে দুষবেন?”

মোদী জমানার জমি অর্ডিন্যান্স নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন বিরোধীরা। এই জমি আইন নিয়েই কংগ্রেসকে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা ছুড়েছেন মোদী। বলেছেন, “এই বিল পাশ করিয়ে আপনারা পূর্ণ কৃতিত্ব নিন। যদি আরও সংশোধনের প্রয়োজন থাকে, তা-ও বলুন। যদি কোথাও মনে হয়, এই বিল কৃষকের বিরুদ্ধে, আমি বদলে দেব। সরকার আসে-যায়, মতাদর্শও আসে-যায়। কিন্তু দেশ মানুষের শক্তিতে চলে।”

শুধু জমি বিল নয়, কালো টাকা, কয়লা কেলেঙ্কারি সব নিয়েই ইউপিএ জমানাকে বিঁধেছেন মোদী। তবে তাঁর সব চেয়ে কড়া বার্তাটি আজ ছিল সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে। সম্প্রতি সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের সময়ে মোদীর ‘নীরবতা’ নিয়ে তাঁকে বিঁধেছিলেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে আজ মোদী জানান, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ও ‘উল্টোপাল্টা’ মন্তব্য বন্ধ করাটা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কর্তব্য। কিন্তু প্রত্যেক কথার উত্তর দিয়ে সময় নষ্ট করা অর্থহীন।

মোদীর কথায়, “আমার সরকারের ধর্ম হল, ‘আগে ভারত’, একমাত্র ধর্মগ্রন্থ ভারতীয় সংবিধান, একমাত্র ভক্তি ‘ভারত ভক্তি’ এবং একমাত্র প্রার্থনা ‘সকলের মঙ্গল’।” বিশেষজ্ঞদের মতে, হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি বারবার উন্নয়নের মুখ ঢেকে দেওয়ায় এমনিতেই অসন্তুষ্ট ছিলেন মোদী। আজ বিরোধীদের অভিযোগ খণ্ডন করার পাশাপাশি সঙ্ঘ পরিবারকেও কড়া বার্তা দিলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement