পাইলটের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা অশোক গহলৌতের। —ফাইল চিত্র
সচিন পাইলট জয়পুরে ফিরেছেন গতকাল, মঙ্গলবার। পরের দিনই নিজের অনুগামীদের নিয়ে জয়সলমের ছাড়লেন অশোক গহলৌতও। গন্তব্য জয়পুর। কিন্তু পাইলটের প্রত্যাবর্তনে তাঁর শিবির যে যথেষ্টই হতাশ, তা খোলাখুলিই বলেছেন গহলৌত। জয়পুরে রওনার আগে মুখ্যমন্ত্রী গহলৌত বলেন, গত এক মাসে যে ভাবে গোটা বিষয়টা হয়েছে, তাতে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক। তবে তাঁর অনুগামী বিধায়কদের ক্ষোভ-অসন্তোষ মেটানোর চেষ্টা করা হবে বলেও জানিয়েছেন গহলৌত।
সচিন পাইলটের বিদ্রোহ ঘিরে রাজস্থানের রাজনীতিতে টানপড়েন চলাকালীন প্রায় এক মাস জয়সলমেরের সূর্যগড়ের হোটেলে ছিলেন গহলৌতের অনুগামী বিধায়করা। সোমবার পাইলটের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হতেই মঙ্গলবার জয়সলমেরে ছুটে যান গহলৌত। আজ বুধবার জয়পুরের বিমানে ওঠার আগে তিনি বলেন, ‘‘বিধায়কদের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যে ভাবে গোটা পর্ব ঘটেছে এবং তাঁরা এক মাস ধরে হোটেলে রয়েছেন, তাতে হতাশা আসা স্বাভাবিক। তবে আমি তাঁদের বুঝিয়েছি যে, দেশ, রাজ্য ও সাধারণ মানুষের সেবা করতে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করতে কখনও কখনও সহ্যশীল হতে হয়।’’
বিধায়কদের এই ক্ষোভ ন্যায়সঙ্গত বলেও মন্তব্য করেছেন গহলৌত। তবে সেই ক্ষোভ-অসন্তোষ মিটিয়ে নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। পাইলটের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের বন্ধুরা যাঁরা চলে গিয়েছিলেন এবং এখন ফিরে এসেছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করব। আশা করি সমস্ত মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারব এবং রাজ্যের সেবা করতে পারব।’’
আরও পড়ুন: এখনও সঙ্কটজনক, প্রণবের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সচিন পাইলটের সঙ্গে কংগ্রেস হাই কম্যান্ডের সন্ধি হওয়ার পর চাপে পড়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। এই এক মাসে যে ভাবে পাইলট শিবিরকে আক্রমণ করেছেন, তার পর তাঁদের এই প্রত্যাবর্তনে তাঁর অস্বস্তিই সবচেয়ে বেশি। যাঁর বিরুদ্ধে কয়েক দিন আগেও ‘বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত’-এর অভিযোগ তুলেছেন, নিকম্মা বলে তোপ দেগেছেন, তার পর সেই পাইলটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা গহলৌতের পক্ষে অস্বস্তিকর। সেই অস্বস্তিই বিধায়কদের উপর চাপিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বর্ষীয়ান গহলৌত বার্তা দিতে চাইছেন এবং চাপে রাখতে চাইছেন বলেই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
মাস খানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে জয়পুর ছেড়ে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন সচিন পাইলট ও তাঁর অনুগামী ১৯ বিধায়ক। সেই বিদ্রোহের জেরে তাঁকে রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় কংগ্রেস। কিন্তু হাল ছাড়েননি পাইলট। দিল্লিতে দরবার করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যায় রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর সমাধান সূত্র মেলে। পাইলট যেমন কিছুটা নমনীয় অবস্থান নেন, তেমনই কংগ্রেস নেতৃত্বও তাঁর দাবিদাওয়া ও অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তার পরেই মঙ্গলবার জয়পুরে ফেরেন পাইলট।
আরও পড়ুন: এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা পরীক্ষা ও সুস্থ হওয়ার মধ্যেই মোট আক্রান্ত ২৩ লাখ ছাড়াল
প্রায় এক মাসের এই টানাপড়েনের পুরো সময়টাই গহলৌত শিবিরের বিধায়করা ছিলেন জয়সলমেরের সূর্যগড়ের হোটেলে। পাইলটের সঙ্গে সন্ধির এই খবরের পরের দিনই সেই ক্ষোভ-অসন্তোষ সামাল দিতে তিন মন্ত্রীকে নিয়ে জয়সলমেরে ছোটেন গহলৌত। এই বিধায়কদের সূত্রে খবর, গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেও কার্যত কোনও শাস্তি না পেয়ে দলে কার্যত স্বমহিমায় পাইলটের প্রত্যাবর্তন তাঁদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। আবার পাইলট ফের তাঁর দুই পদ ফিরে পেতে পারেন, এমন জল্পনাও রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। সেই সব মিলিয়েই ক্ষুব্ধ গহলৌত অনুগামীরা। তবে জয়পুরে ফেরার পথে অবশ্য খোশ মেজাজেই পাওয়া গিয়েছে বিধায়কদের। হোটেল থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে গান গাইতেও দেখা গিয়েছে বিধায়কদের।