—ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার মনোনীত রাজ্যপাল বনাম রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী— দু’জনের লড়াইয়ে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে তামিলনাড়ুর রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে কোনও রকম ‘পরামর্শ’ ছাড়াই দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার মন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজিকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করেন রাজ্যপাল আর এন রবি। এই মর্মে রাজ্যপালের কার্যালয় থেকে এক সরকারি বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। রাজ্যপালের এমন নজিরবিহীন কাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। এর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে গভীর রাতে রাজভবনের তরফে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শে রাজ্যপাল বিষয়টি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তার আগে পর্যন্ত বালাজিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হচ্ছে।
বিষয়টি তখনকার মতো ধামাচাপা পড়েছে বলে মনে করা হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য, আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্ট্যালিন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একজন মন্ত্রীকে অপসারণের মতো যে সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল নিয়েছিলেন, তা অসাংবিধানিক এবং অসর্থনযোগ্য। এ ব্যাপারে রাজ্যপালের দু’টি চিঠিকেই অগ্রাহ্য করা হবে এবং বিষয়টি তাঁকে জানিয়েও দেওয়া হবে।
পথে নেমেছিলেন ডিএমকে সমর্থকেরাও। চেন্নাইয়ে ডিএমকে-র সদর দফতরের বাইরে রাজ্যপাল রবির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। দুগ্ধ ও পশুপালন মন্ত্রী মানো থঙ্গরাজ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, মণিপুরের অশান্তির মতো জ্বলন্ত বিষয়গুলি থেকে আমজনতার নজর ঘোরাতেই এই নাটক রচনা করা হয়েছে।’’ বিজেপির একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অপরাধের অভিযোগ পোস্টারে ছেপে রাজ্যপালকে কটাক্ষও করেছেন ডিএমকে সমর্থকেরা।
এমনিতে অবিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে সব ক’টি বিজেপি-বিরোধী দলই। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির কাজকর্মে একতরফা ভাবে হস্তক্ষেপ করছে আর সে কাজে তাদের অস্ত্র রাজ্যপাল। বহু ক্ষেত্রে সংবিধানকে এড়িয়ে কাজ করার অভিযোগও তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তামিলনাড়ুর চলতি বিষয়টি সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
বালাজি এর আগেও রাজ্যের ডিএমকে সরকারের নানা কাজে বাধা দিয়েছেন, যার ভিত্তিতে অভিযোগ উঠেছে, তিনি সংবিধানকে লঙ্ঘন করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা না বলেই তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যকে অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও সংবিধান লঙ্ঘন, এমনটাই মত আইনের বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের বক্তব্য, সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে আর না এগিয়ে ধামাচাপা দিয়েছেন রাজ্যপাল।