অপহৃত সিআরপিএফ জওয়ান রাকেশ্বর সিং-এর কন্যা । —নিজস্ব চিত্র।
ঘরভর্তি শোকার্ত পরিজনদের ভিড়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা তাক করা ছোট্ট মেয়েটির মুখের উপর। সে অবস্থাতেই কাঁদো কাঁদো মুখে মাওবাদী ‘কাকা’র কাছে তার আর্জি, বাবাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর আর কান্না চাপতে পারনি মাওবাদী হামলায় নিখোঁজ সিআরপিএফ জওয়ান রাকেশ্বর সিংহ মনহাসের ৫ বছরের মেয়ে রাঘবী। সোমবার রাকেশ্বরের মেয়ের কান্নাভরা মুখের ছবিই শিরোনামে উঠে এসেছে।
শনিবার ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-বিজাপুর সীমানার জাগারগুন্ডা-জোঙ্গাগুড়া-তারেমে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এক অভিযানের পর থেকেই নিখোঁজ রাকেশ্বর। অভিযানের সময় মাও-হামলায় নিহত কমপক্ষে ২৩ সিআরপিএফ জওয়ান। আহত ৩১। রাকেশ্বরের স্ত্রী মিনু মনহাস জানিয়েছেন, বিজাপুর থেকে এক সাংবাদিক তাঁকে ফোন করে বলেন যে মাওবাদীরা তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছে। তাদের কাছে তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্য একটি ভিডিয়ো তৈরি করতে হবে। মিনুর কথা মেনে ‘পাপা’র মুক্তির জন্য আর্জি জানিয়েছে রাঘবী। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছে, ‘‘পাপার পরী পাপাকে খুব মিস্ করছে। আমি পাপাকে খুব ভালবাসি। প্লিজ নকশাল আঙ্কল, আমার পাপাকে ঘরে পাঠিয়ে দাও।’’
রাঘবীর মতোই রাকেশ্বরের ভাইপো ৭ বছরের আকাশও কেঁদে ভাসাচ্ছে। সাংবাদিকদের দেখলেই বলে উঠছে, ‘‘আঙ্কল, আপনারা তো মিডিয়ায় রয়েছেন। আমার কাকা কোথায় আছে নিশ্চয়ই বলতে পারবেন!’’ তবে তাকে সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। তা সত্ত্বেও হাল ছা়ড়ছেন না রাকেশ্বরের মা ৭৫ বছরের কুন্তি দেবী। তাঁর প্রয়াত স্বামীও সিআরপিএফ-এর জওয়ান ছিলেন। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। কুন্তি দেবীর কথায়, ‘‘নিজের বাবাকে দেখেই আমার ছেলে সিআরপিএফ-এ যায়। সরকার নিশ্চয়ই আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টার কসুর করবে না।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ভরসা রাখছেন মিনুও। তিনি বলেন, ‘‘৫ দিন আগেও আমার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। এর পর টিভিতে হামলার খবর দেখে বার বার ফোন করেছি। কিন্তু ওর কোনও সাড়া পাইনি।’’ রাকেশ্বরের এক সহকর্মীকে ফোন করে মিনু জানতে পারেন, অভিযানের দিন থেকে নিঁখোজ তাঁর স্বামী।
রাকেশ্বরের পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছেন সিআরপিএফ প্রধান পি সি গুপ্ত। বলেছেন, ‘‘সরকার থেকে গোটা সিআরপিএফ বাহিনী তাদের পাশে রয়েছে। মনহাস পরিবারের ছেলেকে ফিরিয়ে আনবই।’’