হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ় উমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত।
চার বছর পরে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে শ্রীনগরের জামিয়া মসজিদে শুক্রবারের নমাজ পড়ালেন নরমপন্থী হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ় উমর ফারুক। সেই সঙ্গে দাবি করলেন, শান্তিপূর্ণ পথে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের কথা বলার জন্যই তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের দেশ-বিরোধী, শান্তি-বিরোধীর তকমা দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ঘুষ নিয়ে জঙ্গিকে সাহায্য করার অভিযোগে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডেপুটি সুপার শেখ আদিল মুশতাককে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। তিন বছরের মধ্যে এ নিয়ে পুলিশের দুই কর্তা জঙ্গি-যোগে গ্রেফতার হলেন।
২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের আগে বেশ কয়েক জন রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দি করেছিল প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ়ও। তার পর থেকে বারবার নানা বিষয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে চাইলেও তাঁকে গৃহবন্দিই করে রেখেছিল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন।
আজ জামিয়া মসজিদে শুক্রবারের নমাজ পড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁর উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, তা আইনি নোটিস পাঠিয়ে পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মিরওয়াইজ়। জবাবে পুলিশ জানায়, কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। এর পরেই জামিয়া মসজিদে শুক্রবারের নমাজ পড়ান তিনি। তার পরে মসজিদে জমায়েত হওয়া বাসিন্দাদের মিরওয়াইজ় বলেন, ‘‘আপনাদের থেকে চার বছর দূরে থাকাটা ছিল খুবই কষ্টের। কিন্তু আপনারাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন। আপনারা দয়ালু। আপনাদের মানসিক শক্তিও অপরিসীম। ২০১৯ সালের অগস্ট মাস থেকে (বিশেষ মর্যাদা লোপ) আপনাদের উপরে অনেক অবিচার হয়েছে।’’ মিরওয়াইজ়ের দাবি, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরকে কেবল একটি এলাকার বিষয় হিসেবে না দেখে মানবিক সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। এ জন্য শান্তিপূর্ণ আলোচনা প্রয়োজন।’’ ইউক্রেন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন এটা যুদ্ধের সময় নয়। কথাটি খুবই সত্য। আমরা সব সময়েই হিংসার পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছি। কিন্তু সে জন্য আমাদের দেশ-বিরোধী, শান্তি-বিরোধী তকমা দেওয়া হয়েছে। এখনও কাশ্মীরের অনেক নেতা, তরুণ, সাংবাদিক জেলে পচছেন।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির পাশাপাশি মিরওয়াইজ়ের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ও জম্মু-কাশ্মীরের ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান দরখশান আইনদ্রাবিও।
রাজনীতিকদের একাংশের মতে, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করাতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার আগে হুরিয়তের নরমপন্থী অংশের রফাসূত্র খোঁজার চেষ্টা করতে পারে তারা। মিরওয়াইজ়ের মুক্তি সেই কৌশলের অঙ্গ হতে পারে।
অন্য দিকে এক জঙ্গির কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার অভিযোগে এ দিন গ্রেফতার হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুুলিশের ডেপুটি সুপার শেখ আদিল মুশতাক। পুলিশের অভিযোগ, মুজ়ামিল জাহুর নামে ওই লস্কর জঙ্গির কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন আদিল। তার পরে তাকে আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ বলে দিয়েছিলেন। এমনকি সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের মামলার এক তদন্তকারী অফিসারকে ভুয়ো অভিযোগে ফাঁসানোর জন্য ওই জঙ্গিকে সাহায্য করেছিলেন তিনি। এর আগে জঙ্গি-যোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আর এক ডেপুটি সুপার দাবিন্দর সিংহ।