অরুণাচলে ভারত-চিন সীমান্ত। ফাইল চিত্র।
ভারতের প্রতিবাদ সত্ত্বেও অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার বার্তা দিয়েছে চিন। এমনকি, অরুণাচলকে ‘সার্বভৌম চিনের অংশ’ বলে চিহ্নিত করেছে শি জিনপিং সরকার। এই পরিস্থিতিতে লাদাখের মতো সংঘাতের পুনরাবৃত্তি এড়াতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) শান্তি এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখায় সওয়াল করল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘‘২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকেই আমাদের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। সীমান্তে শান্তি না ফিরলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মুশকিল।’’ বুধবার চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেছিলেন, ‘‘জাংনান (অরুণাচল প্রদেশের চিনা নাম) চিনের ভূখণ্ডের অংশ। চিন সরকার আইন মেনেই প্রশাসনিক প্রয়োজনে কিছু নাম পরিবর্তন করেছে। এটি চিনের সার্বভৌম অধিকার।’’ তারই প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন অরিন্দম।
প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত একদলীয় চিনের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস সোমবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, রবিবার সে দেশের স্বরাষ্ট্র দফতর অরুণাচলের ১১টি এলাকার নাম পরিবর্তন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি পর্বতশৃঙ্গ, ২টি মালভূমি অঞ্চল, ২টি আবাসিক এলাকা এবং ২টি নদী। এর পরেই বিদেশ মন্ত্রকের তরফে চিনা পদক্ষেপের নিন্দা করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বলেছিলেন, ‘‘অরুণাচলের যে ১১টি অঞ্চলের নাম বদলের কথা বলা হচ্ছে সেগুলি ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ।’’ কিন্তু অবস্থানে অনড় থাকারই বার্তা দিয়েছে বেজিং।
অরুণাচলকে ভারতীয় ভূখণ্ড হিসাবে কখনওই স্বীকৃতি দেয়নি চিন। তাদের দাবি, উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই প্রদেশ অধিকৃত তিব্বতের দক্ষিণ অংশ। এর আগেও দু’বার অরুণাচলের বিভিন্ন অংশের নাম বদল করেছে চিন। ২০১৭ সালে দলাই লামার অরুণাচল সফরের পরে সে রাজ্যের ৬টি জায়গার নাম বদল করে চিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ২০২১ সালে আরও ১৫টি জায়গায় নাম বদলের কথা জানিয়েছিল তারা। লাদাখের পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে তাওয়াং-সহ অরুণাচলের বেশ কিছু এলাকাতেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে চিনা ফৌজের অনুপ্রবেশের ‘খবর’ এসেছে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বেজিংয়ের এই আগ্রাসী মনোভাব নতুন করে সামরিক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বলেছিলেন সীমান্তে শান্তি না ফিরলে ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। ভারত-চিন সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনটি ‘এম’-এর উত্থাপন করেন জয়শঙ্কর। তা হল, ‘মিউচুয়াল সেনসিটিভিটি’, ‘মিউচুয়াল রেসপেক্ট’ এবং ‘মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট’। তিনি বলেছিলেন, “আমরা এই আশা করতেই পারি যে, এশিয়ার উত্থান হতে থাকবে। সমস্ত সূচক সেই ইঙ্গিত করছে। তবে কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে, তা নির্ভর করছে ভিতরের চিড়গুলি কী ভাবে মেরামত করা হচ্ছে তার উপরে।’’