—ফাইল চিত্র।
বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর যখন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের প্রশংসা করেছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘ওঁকে (সাধ্বী প্রজ্ঞাকে) আমি জীবনেও ক্ষমা করতে পারব না’। তার পরেও অবশ্য প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি। দিনকয়েক আগে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়তও গডসেকে ‘দেশভক্ত’ আখ্যা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা কোনও বক্তব্য পেশ করতে শোনা যায়নি। এ বার খোদ মোদী সরকারের মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ, গান্ধীর হত্যাকারীকে ‘ভারতের সুপুত্র’ বলায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই নিশানা করলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতারা। প্রশ্ন উঠল, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর লোগোতে যাঁর চশমা শোভা পাচ্ছে, সেই সরকারের মন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে মৌন কেন মোদী। কংগ্রেসের দাবি, মোদীর নীরবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, গিরিরাজের কথায় সায় রয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর।
ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়াতে গত কাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বলেছিলেন, ‘‘উনি (গডসে) যদি গান্ধীর হত্যাকারী হয়ে থাকেন, তা হলেও তিনি (গডসে) ভারতের এক জন সুপুত্র। উনি ভারতে জন্মেছিলেন। বাবর কিংবা ঔরঙ্গজেবের মত বাইরে থেকে আসা আক্রমণকারী ছিলেন না।’’ সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে টিপু সুলতানের ছবি নিয়ে প্রচার এবং ঔরঙ্গজেবের ছবি নিয়ে শোভাযাত্রাকে ঘিরে মহারাষ্ট্রের কোলাপুর ও আহমেদনগরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তা নিয়ে বিতর্কে জড়ান মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস ও এমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ফডণবীসের মন্তব্য ছিল, ‘‘মহারাষ্ট্রের কিছু জেলায় হঠাৎ ঔরঙ্গজেবের সন্তানদের জন্ম হয়েছে, যাঁরা তাঁর ছবি নিয়ে প্রচার শুরু করেছে।’’ ওয়েইসি বিজেপি নেতার মন্তব্যের প্রতিবাদ করে তাঁর কাছে ‘গডসের সন্তানদের’ নাম জানতে চান। ছত্তীসগঢ়ে এই বিতর্ক নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল গিরিরাজকে। যার জবাবে গডসেকে ‘ভারতের সুপুত্র’ আখ্যা দিয়েছেন গিরিরাজ আর বাবর, ঔরঙ্গজেবকে ‘বাইরের আক্রমণকারী’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংবিধানিক পদে থাকা গিরিরাজ সিংহের মুখে গডসের প্রশংসা শুনেই মোদীকে নিশানা করে আক্রমণে গিয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘প্রথমে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়ত নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বললেন। এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের মুখেও শোনা গেল গডসের প্রশংসা।কিন্তু যিনি আগে থেকেই চলে আসা ‘নির্মল ভারত অভিযান’কে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করলেন আর মহাত্মার চশমাকেতার লোগো করলেন, সেই ব্যক্তি নিজে কোনও কথা বলছেন না। এমন মন্তব্য করতে সহযোগীদেরও আটকাচ্ছেন না তিনি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না।’’ এক কদম এগিয়ে টুইটারে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের মন্তব্য, ‘‘ত্রিবেন্দ্র কিংবা গিরিরাজ সিংহের মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি তাঁদের কথা পুরোপুরি ভাবে অনুমোদন করেন।’’
সিপিআই নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় বিশ্বম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের মন্তব্যকে তুলে ধরে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে গিয়েছে। জি-২০ সম্মেলনের আগে দেশ এই বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর থেকে ‘মন কি বাত’ শুনতে চাইছে।’’ রাজ্যসভার সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল গিরিরাজকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘এই মন্তব্যের পর অনেকেই হয়তো আপনাকে দেশের সুপুত্র বলবেন না।’’ সিব্বলের দাবি, গিরিরাজের মন্তব্যের নিন্দা করে বক্তব্য রাখুন অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী।