সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ফাইল চিত্র
ফাঁসি দেওয়ার প্রশ্নে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তদের ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল থেকে শিক্ষা নিয়েই এই সিদ্ধান্ত।
সুপ্রিম কোর্ট ছয় বছর আগে শত্রুঘ্ন চৌহান মামলার রায়ে ফাঁসির আসামি বা তার হয়ে পরিবারের তরফে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর প্রশ্নে বেশ কিছু নির্দেশিকা দেয়। যাতে ফাঁসির আসামির স্বার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আজ সেই নির্দেশিকায় পরিবর্তনের সুপারিশ করে অমিত শাহের মন্ত্রক। শীর্ষ আদালতকে কেন্দ্র জানায়, ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সাজা সংশোধনের আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) দাখিলের সময়সীমা স্থির করা হোক। কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হলে পরবর্তী ধাপে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হওয়ার সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানো ও প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে পরের ১৪ দিনের মধ্যে যাতে ফাঁসি হয়, তার জন্যও নির্দেশিকায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আবেদন জানানো হয়েছে।
মন্ত্রকের যুক্তি, আবেদনজনিত দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের যন্ত্রণা বেড়েই চলে। তা ছাড়া, সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করতেই ফাঁসির মতো চরমতম শাস্তির সুপারিশ করা হয়। অতিরিক্ত দেরি হলে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, যখন কোনও আসামি চরম শাস্তির কথা জেনেই গিয়েছে, তখন অতিরিক্ত বিলম্ব সে দিক থেকেও অমানবিক।
নির্ভয়া কাণ্ডে চার অভিযুক্তের ফাঁসির দিন ঘোষণা হয়েছিল ২২ জানুয়ারি। কিন্তু দোষীরা আলাদা আলাদা করে প্রথমে রায় সংশোধনের আর্জি, তারপরে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কৌশল নেওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। নতুন ফাঁসির দিন ধার্য হয় ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সে দিনও যে ফাঁসি হবেই তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই। স্বরাষ্ট্র সূত্রের বক্তব্য, নির্ভয়া কাণ্ডে দোষী বিনয় শর্মা ও মুকেশ কুমারের রায় সংশোধনের আর্জি খারিজ হলেও, পবন গুপ্ত ও অক্ষয়কুমার সিংহ এখনও সেই আর্জি জানায়নি। ফলে তাদের এখনও সেই আর্জি জানানোর সুযোগ রয়ে গিয়েছে।
বিনয়ের প্রাণভিক্ষার আর্জিও রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছে। যদিও বিনয় জানিয়েছে, সে ওই আবেদন জানায়নি। তাই এ ক্ষেত্রেও চার জনেরই আলাদা করে প্রাণভিক্ষার আর্জি করার সুযোগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘যেহেতু অপরাধ চার জনে এক সঙ্গে করেছে, তাই আদালতের রায় মেনে চার জনকেই এক সঙ্গে ফাঁসি দিতে হবে। ফলে এক জনের আবেদন কোথাও বিবেচনাধীন থাকলে সকলের ফাঁসি আটকে যাবে।’’
শেষ পর্যন্ত সকলের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলেও আবেদন খারিজ ও ফাঁসির মধ্যে অন্তত ১৪ দিনের ব্যবধান থাকতে হবে। ফলে ফাঁসি ১ ফেব্রুয়ারিই হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয়ে স্বরাষ্ট্র কর্তারাই।