CAA

সিএএ-শঙ্কায় কী পদক্ষেপ, জবাব নেই শাহ-মন্ত্রকের

এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের সাংসদ রীতা বহুগুণা জোশী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৫
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র

কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদে পথে বসে লাগাতার আন্দোলন করছেন কয়েক হাজার মানুষ। অথচ কেন ওই আইন আনা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ নিরসনে সরকার কোনও আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করেছে কি না, সংসদে সে সব প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর।

Advertisement

গত ডিসেম্বরে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। তার পর থেকেই প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই-সহ দেশের নানা প্রান্তে ওই আইনের প্রতিবাদে সড়কে বসে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে নাগরিক এবং ছাত্র সমাজের বড় অংশ। শুরু থেকেই অভিযোগ উঠেছে, ওই বিলটি ঘিরে মানুষের মধ্যে যে সংশয় ও অবিশ্বাস রয়েছে, তা কাটাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন্দ্র। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের সাংসদ রীতা বহুগুণা জোশী। জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, একাধিক রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটিতেও। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁরা নিজেদের নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত, তাঁদের বোঝাতে কি কোনও পদক্ষেপ করেছে সরকার? সে প্রশ্নে নীরব অমিত শাহের মন্ত্রক।

সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সংসদে পেশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যে অ-মুসলিম (হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, জৈন ও খ্রিষ্টান) শরণার্থীরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে সরকার। ওই আইন পাশ হওয়ার পরেই এ দেশের মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকার জাতীয় জনগণনার সঙ্গেই এনপিআর-এর তথ্য নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে। যে হেতু এনপিআর হল জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রথম ধাপ, সেই কারণে জনমানসে ধারণা তৈরি হয়, সরকারের আসল লক্ষ্য হল এনআরসি তৈরি করে সন্দেহজনক বিদেশি নাগরিক (মূলত মুসলিম)-দের চিহ্নিত করে প্রথমে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা। পরে ভারত থেকে তাড়ানো। অসমে এনআরসি-র ফলে কয়েক লক্ষ মানুষের হয়রানি এই আতঙ্ক বহু গুণ বাড়িয়েছে। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নামে মুসলিম সমাজের একাংশ। সরব দেশি-বিদেশি বহু মানবাধিকার সংগঠনও।

Advertisement

এ নিয়ে আশঙ্কা দূর করতে সরকার কোনও পদক্ষেপ করেছে কি না তা জানতে চেয়েছিলেন রীতা বহুগুণা। জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, ২০১৬ সালে বিলটি সংসদে পেশ হওয়ার পরে তা যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কমিটির কাছে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৯ হাজার সুপারিশ জমা পড়েছিল। কমিটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আমজনতা, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই আইন আসায় জনগণের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা দূর করার প্রশ্নে সরকারের পদক্ষেপ প্রশ্নে একটি বাক্যও খরচ করেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। নিজেদের সংশয় দূর করতে শাহের কাছে সময় চেয়েছিলেন শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তাঁদের সময় দেওয়া হয়নি। বিরোধীদের মতে, সরকার ইচ্ছে করেই ধোঁয়াশা রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী। মানুষ যত বিভ্রান্ত থাকবে, তত বিভেদের রাজনীতি করতে সুবিধে হবে বিজেপির।

স্বরাষ্ট্র কর্তারা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, আইনে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। বিজেপির একাংশ মনে করে, ধোঁয়াশা কাটাতে বার্তা দেওয়া জরুরি। কিন্তু দেবে কে— তা জানে না কেউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement