অমিত শাহের কথায় বিতর্কের ঝড়। —ফাইল চিত্র।
মহিলাদের উপরে যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ উঠলেও এখনও বরখাস্ত হননি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। এ নিয়ে নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তার মধ্যেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং একটি রাজ্যের মহিলা শাখার প্রধানের মন্তব্যে গোটা বিষয়টি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল।
এই মুহূর্তে ভারতের বাইরে রয়েছেন আকবর। আগামিকাল, রবিবার তাঁর দেশে ফেরার কথা। তার ঠিক আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে #মিটু বিতর্কে আকবরের যোগ নিয়ে প্রথম মুখ খুলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে পোস্ট করা কোনও বিষয়ের উপর মন্তব্য করা খুব কঠিন। কারও ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে কেউ ওয়েবসাইটে পোস্ট করলে দেখতে হবে, সেটি সত্যি না মিথ্যা। এমন ঘটনা হয়েছিল কি হয়নি। যাঁর নাম নিয়ে পোস্ট হয়েছে, তিনিই সে কাজ করেছেন, না অন্য কেউ? আপনিও আমার নামে কিছু পোস্ট করতে পারেন। সব বিষয় দেখতে হবে। যখন দেখব, তখন পর্যালোচনা করব।’’
অমিতের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগকারীদের একজন টুইটারে প্রশ্ন তুললেন, ‘‘অমিত শাহ কি আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন?’’ আরও ধারালো আক্রমণ এসেছে কংগ্রেসের তরফে। দলের নেতা পবন খেরা বলেন, ‘‘অমিত শাহের বক্তব্যের শেষের অংশটি শুনেছেন ভাল করে? তিনি আশঙ্কা করেছেন, যে কেউ তাঁর নামেও কিছু পোস্ট করতে পারেন। তা হলে কি বিজেপি সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধেও এমন কোনও অভিযোগ ওঠার আশঙ্কা করছেন?’’
#মিটু নিয়ে আজ দিল্লির যন্তর-মন্তরে মহিলা সাংবাদিকরা আকবরের পদত্যাগের দাবি তুলে পথে নামেন। সেখানেও অমিত শাহের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গটি ওঠে। ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের অনেকেরই প্রশ্ন, যে প্রধানমন্ত্রী নিজের ঢাক পেটাতে মহিলাদের সম্মান রক্ষার কথা বলেন, তাঁর মন্ত্রিসভার এক সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক মহিলার এমন গুরুতর অভিযোগ আসার পাঁচ দিন পরেও কেন তাঁকে সরানো হল না? মন্ত্রীর বিদেশ সফরের নামে কেন বিষয়টি অহেতুক ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে? আর কেনই বা বিজেপি সভাপতি অভিযোগকারীদের দিকেই আঙুল তুলছেন?
এই ক্ষোভ আরও চড়েছে মধ্যপ্রদেশে বিজেপিরই মহিলা মোর্চার প্রধান লতা কেলকরের মন্তব্যে। বিজেপির এই মহিলা নেত্রী #মিটু আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন বটে, কিন্তু আকবরের বিরুদ্ধে সরব হওয়া মহিলা সাংবাদিকদের ছেড়ে কথা বলেননি! উল্টে যে সব মহিলা সাংবাদিক আকবরের পদত্যাগের দাবি তুলছেন, তাঁরা যে ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ নন, কার্যত এমনটাই বলেছেন তিনি। লতা কেলকরের কথায়, ‘‘মহিলা সাংবাদিকদের আমি এতটাও নিরীহ মনে করি না, যে তাঁদের যে কেউ অপব্যবহার করতে পারেন।’’
আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা ইস্তক বিজেপি নেতৃত্ব এবং মোদী মন্ত্রিসভার সিংহভাগ সদস্যই মুখে কলুপ এঁটেছেন। কেবলমাত্র নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী আকবরের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করেছেন। এ নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন চলছিলই। তার মধ্যেই অমিত শাহ এবং লতা কেলকরের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়ল বিজেপির।