গয়ার অলিগলিতে বেড়ে উঠছিলেন। বাবা রিকশাচালক। কখনও ভাবেননি ছেলে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবেন। তবে নিজে সে ভাবে পড়াশোনার সুযোগ না পেলেও সামর্থ্য অনুযায়ী ছেলেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু গরিবের ঘরে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাও যে মানা! স্বপ্নেরও তো খরচ রয়েছে। রিকশাওয়ালার ছেলে স্বপ্ন দেখতেন আইআইটি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু এত টাকা কোথায়?
শুভম কুমারের বাবা রামচন্দ্র প্রসাদ গয়ায় রিকশা চালাতেন। নামমাত্র উপার্জনে সংসার টানতে হত তাঁকে। এই অবস্থায় ছেলের পড়াশোনার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে।
শুভম নিজেও একটি দোকানে কাজে যোগ দেন। নিজের উপার্জনেই পড়াশোনার খরচ চালাতে শুরু করেন।
শুভম চেয়েছিলেন জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসতে। কিন্তু তার জন্য আলাদা করে টিউশন দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না বাবার।
তখনই দেবদূতের মতো এগিয়ে আসেন বিহারের তৎকালীন ডিজিপি অভয়ানন্দ। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দেখার মাঝেই অবসর সময়ে তিনি আইআইটি-জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ক্লাস নিতে শুরু করলেন।
শুভমের মতো দরিদ্র পরিবারের আরও অনেক মেধাবী ছেলে-মেয়েদের পড়াতেন তিনি। তারই ফসল ২০১৩ সালে আইআইটি-জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ওবিসি ক্যাটেগরিতে র্যাঙ্ক করেন শুভম।
শুভম এখন আইআইটি ইঞ্জিনিয়ার। আইপিএস অভয়ানন্দকে আজও তিনি ঈশ্বরের জায়গায় বসান।
বিহারের দরিদ্র পরিবার থেকে বাছাই করা ছাত্রদের নিয়ে সুপার ৩০ ক্লাস চালু করেছিলেন আনন্দ কুমার। আনন্দ কুমারের ভূমিকায় হৃত্বিক রোশন ‘সুপার ৩০’ নামে ছবিও করে ফেলেছেন।
এই আনন্দ কুমারের সঙ্গে ‘সুপার ৩০’ চালু করার পিছনে অভয়ানন্দেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।
পটনা সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। ২০১১ সালে তিনি বিহারের ডিজিপি হিসাবে শপথ নেন। তাঁর বাবা জগদানন্দও ১৯৮৫ সালে বিহারের ডিজিপি ছিলেন।
অভয়ানন্দ শুধু পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ক্লাস নিয়েছেন তা-ই নয়, আরও অনেক সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তাঁর থানার সবাইকে মাইনের কিছু অংশ দান করিয়ে বিহারের সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নার্সিংহোমের মতো দুরন্ত করে তুলেছিলেন।
পুলিশ ফোর্সে লোকবলের ঘাটতি মেটাতে অভয়ানন্দ অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের নিয়োগের সুপারিশ করেছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা বিহার সরকার রূপায়িত করেছিল। পাঁচ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সেনাকে পুলিশে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাতে সুবিধা ছিল, তাঁদের আলাদা করে আর প্রশিক্ষণ দিতে হয়নি।
তাঁর এই পরিকল্পনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশাও অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের পুলিশে নিয়োগ করতে শুরু করে।
২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আনন্দ কুমারের সঙ্গে ‘সুপার ৩০’-তেই পড়াতেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি আনন্দ কুমারের থেকে আলাদা হয়ে আরও অন্য পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের ক্লাস নিতে শুরু করেছিলেন। সেই সময়ই শুভমের সঙ্গে পরিচয় তাঁর।