সালটা ১৮৬৩। ভারতবর্ষ তখন ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্গত। বম্বে একটা প্রেসিডেন্সি শহর।
এ্যালিস এবং জন লকউড কিপলিং স্ট্যাফোর্ডশায়ারের রুডইয়ার্ড লেকের ধারে রুডইয়ার্ড গ্রামে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
তাই ৩০শে ডিসেম্বর ১৮৬৫ সালে যখন কিপলিং দম্পতির বম্বে শহরে প্রথম সন্তান জন্মাল তখন তারা তার নাম রাখলেন রুডইয়ার্ড।
মুম্বইয়ে জে জে আর্ট কলেজের ক্যাম্পাসে বাড়িটা আজও রয়েছে যেখানে জন্মেছিলেন জোসেফ রুডইয়ার্ড কিপলিং।
কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ গাছালির মধ্যেই বাগান দিয়ে ঘেরা শান্ত বাড়িটা তার ভগ্ন দশাতেও চুপচাপ অতীতের স্মৃতি বহন করছে। রুডইয়ার্ডের বাবা জন লকউড কিপলিং জে জে আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এক সময় রুডইয়ার্ড ও তার ভাই বোনেরা মাতিয়ে রাখত এই বাড়ি। জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছর তার এই বাড়িতেই কাটে। এই পাঁচ বছরের বেশির ভাগ সময়টাই কাটে তার বাড়ির আয়ার সঙ্গে। সে সময় আয়ারা বেশির ভাগই গোয়ার নেটিভ ক্যাথলিক পরিবার থেকে আসত। রুডইয়ার্ডের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার সঙ্গে আর এক জন সব সময়ের সঙ্গী ছিল লাল সোনালি পাগড়ি পরিহিত সুরাতের ছেলে মিতা। আয়া ও মিতা রূপকথার গল্প শুনিয়ে তার মনের মধ্যে কল্পনার নানা জাল বুনতেন। রুডইয়ার্ডের লেখায় তাই বারে বারে ফিরে এসেছে ভারতীয় আয়াদের কথা। পাঞ্চ ও জুডি এ রকমই তার জীবন থেকে উঠে আসা চরিত্র।
‘দ্যা ফার্স্ট ব্যাগ’ এ রুডইয়ার্ড শব্দ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তাদের বম্বের দিনগুলো, যার সংক্ষিপ্ত অংশ বাঙলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়— আয়া, হামাল ও মিতা পাঞ্চকে শুইয়ে দিলেন। জুডি আগে থেকে মশারিতে ঢুকে পড়েছে। সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছে। পাঞ্চ জেগে নৈশ ভোজের জন্য। —পাঞ্চ বাবা বিদায় দেবে? আয়া ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে বলল। —‘না’ পাঞ্চ বলল। পাঞ্চ বাবা চায় সেই গল্পটা শুনতে, যেটাতে রানি বাঘে পরিণত হয়েছিল। মিতা গল্পটা বলবে, হামাল দরজার পিছন থেকে সিংহের ডাক ডাকবে উপযুক্ত সময়ে।’
তার মা চেয়েছিলেন তাকে খাঁটি সাহেবি কায়দায় বড় করে তুলতে। তাই তিনি তাকে পাঠিয়ে দেন ইংল্যান্ডে পড়াশুনোর জন্য, ছ’বছর বয়েসেই। সে সময় এ রকম চল ছিল। চল্লিশের দশক থেকে এই রেওয়াজ শুরু হয়। সে সময়ের বম্বে টাইমসের পাতা উল্টোলে প্রায়ই বিজ্ঞাপন থাকত অমুক গভর্নেস তার নিজের দায়িত্বে ব্রিটিশ সন্তানদের নিয়ে যেতে চান ইংল্যান্ডে লেখা পড়া ও ইংরাজি আদবকায়দা শেখাবার জন্য। ইংলান্ডে ওয়েস্টওয়ার্ড হো তে পড়াকালীন তার সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ হয়। প্রধান শিক্ষক তার লেখা কবিতার প্রশংসা করতেন। কলেজের পত্রিকার সম্পাদনা করার কাজ তাকে প্রধান শিক্ষকই দিতেন। এই সময়ের লেখা কবিতাগুলো রুডইয়ার্ড তার বাবার কাছে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দিতেন। জন লকউড কিপলিং তা ‘স্কুলবয় লিরিক’ নামে ১৮৮১ সালে প্রকাশ করেন।
১৮৮২ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। তার বাবা তখন লাহৌরে। সংগ্রহালয় কিউরেটর। রুডইয়ার্ড যান বম্বে প্রেসিডেন্সির আর এক শহর সেই লাহৌরেই। সেখানে তিনি একটি সংবাদপত্র সম্পাদনার কাজ পান। ক’বছর পরে এলাহাবাদের সংবাদপত্র পায়োনিয়ার থেকে ডাক আসে। এই সংস্থায় তার ব্যক্তিগত সাহিত্যের কাজ অনেক স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাধীন ছিল। এ সময়ে তিনি নানা ব্যঙ্গাত্মক কবিতা, ৭০টি ছোট গল্প লেখেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তার এই রচনাগুলোয় এডগার এ্যালেন পো, মোপাসঁ, ব্রেট হার্টের প্রভাব স্পষ্ট। রুডইয়ার্ডের প্রথম উপন্যাস ‘দ্যা লাইট দ্যাট ফেইল্ড’ তেমন সফলতা পায়নি। কিন্তু তার ‘লাইফ'স হ্যান্ডিক্যাপ’, কবিতা ‘ব্যারাকরুম ব্যালাডস’এ অ্যালফ্রেড, লর্ড টেনিসনের জায়গাতে নিজেকে তিনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। ‘ড্যানি ডিভের’, ‘টমি’, ‘ফাজি-উজি’ এবং ‘গঙ্গাদিন’-এ তিনি এক নতুন রচনা শৈলীর জন্ম দেন।
বেশ কিছু দিন আগে এক বার তাদের বম্বের বাড়িটিকে রুডইয়ার্ড কিপলিংএর স্মরণে সংগ্রহালয় তৈরি করার পরিকল্পনা হয়। বাড়িটিতে কথা ছিল আঁকা ছবি সংগ্রহ করে রাখা হবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। ২০০৭ সালে শিল্পপতি জিন্দলদের পরিবারের মহিলা সঙ্গীতা জিন্দল জানালেন তার জেএসডবলিউ ফাউন্ডেশন এ বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে। সে সময় তিনশো হাজার পাউন্ডের প্রোজেক্টের মধ্যে থেকে বাড়িটিতে আঁকা ছবির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। ভারতের বহু নামী দামি শিল্পীদের ছবির সঙ্গে জন গ্রিফিথস্এর স্কেচও জোগাড় করা হয়, যিনি রুডইয়ার্ডের সমসাময়িক ছিলেন। কিন্তু সংগ্রহশালার প্রোজেক্ট এখন বন্ধ পড়ে আছে। কেউই চাননি রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর স্মরণে কিছু হোক, বলেছিলেন প্রজেক্টের কর্ণধার গোরাসকর। তিনি যখনই এই প্রজেক্ট নিয়ে মিউনিসিপালিটির কাছে ডিনস রেসিডেন্সের বদলে ‘কিপলিং হাউস’ বলে উল্লেখ করেছেন, তখনই তারা অসন্তুষ্ট হন। জন লকউড কিপলিং ছিলেন জে জে আর্ট কলেজের প্রথম ডিন। আর্ট কলেজের অনতিদূরে ক্রফোর্ড মার্কেট তৈরির পরিকল্পনায় লকউড কিপলিং-এর অবদান আছে। ক্রফোর্ড মার্কেট সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। গোরাসকর জানিয়ে ছিলেন, লকউড কিপলিংএর কোনও অবদান পাওয়া গেলে ভাল নতুবা রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর স্মরণে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া যায় না।
বাড়িটিতে একটা নামফলকে ছিল এখন সেটাও নেই। জে জে স্কুল অফ আর্টের চৌহদ্দির মধ্যে অযত্নে পড়ে জন লকউড কিপলিং এর বাড়িটা। এখন সকলের কাছে ডিনস্ রেসিডেন্স নামেই পরিচিত। হাল্কা সবুজ রংএর কাঠের গথিক ধাঁচে তৈরি। বাড়িটির একতলা দোতলায় অনেকগুলো ঘর আছে। আদি বাড়িটির পুরোটাই প্রায় ভেঙে গিয়েছিল, উই পোকা ধরেছিল। সংস্কার করা হয় জিন্দলদের সাহায্যে। এখন কাঠের জাফরি বেয়ে আগাছার গুল্ম লতিয়ে উঠেছে। আগাছার জঙ্গলের মাঝখানে বাগানের একটা ভাস্কর্য মাথায় গামলা নিয়ে বাড়িটির সদরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। গামলাটায় একটিও গাছ আজ আর পোঁতা নেই। ভিক্টোরীয় যুগের স্থাপত্য দুটো সিংহ চটা ওঠা অবস্থায় বাড়িটির পোর্টিকোতে নিরীহভাবে উপেক্ষার পাত্র হিসাবে নিজেদের পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছে। বাড়িটির সদর দরজায় ঝুলছে এ যুগের একটা তালা।
কিন্তু কেন এই নোবেলজয়ী লেখকের জন্মস্থানের দরজা সাধারণের জন্য বন্ধ? তারই সমসাময়িক নোবেল জয়ী লেখক রবীন্দ্রনাথের আর কিছু দিন বাদেই স্থানে স্থানে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হবে যা প্রত্যেক বছর হয়ে থাকে। কিন্তু কিপলিংএর প্রতি কেন এ উদাসীনতা? রুডইয়ার্ড কিপলিংএর লেখা জাঙ্গল বুকের অ্যানিমেটেড ভার্সন ছোটরা আনন্দ করে দেখে। বালু, বাঘিরা, মোঙ্গলি চরিত্রগুলোর নামেও ভারতীয় করণের প্রয়াস পরিষ্কার। রুডইয়ার্ড কিপলিং কেন মুম্বইবাসী তথা ভারতবাসীর মনে জায়গা করে নিতে পারলেন না?
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কালজয়ী লেখক। আর রুডইয়ার্ড কিপলিং তার সময় কাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তার উপর প্রভাব পড়েছে রাজনীতির, মানসিকতার। ভারতীয়রা যার মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার আভাস পান। ‘জাঙ্গল বুক’, ‘কিম’-এ তৎকালীন চলতি ভাষায় ‘এক্সোটিক ইস্ট’কে তুলে ধরে জনপ্রিয় হন তিনি তথাকথিত সভ্য জাতি হিসাবে পরিচিত ব্রিটিশ সমাজের কাছে।
মোঙ্গলি, কিম— এরা ছেলেমানুষি করে, ছেলেসুলভ দুষ্টুমি করে আনন্দ পায়। কিন্তু এরা কখনই ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ অধীনে রাখার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি বা ভারতের প্রতি এবং অন্য উপনিবেশের প্রতি ব্রিটিশ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদ করে না। চরিত্রগুলোর মজার ছেলেমানুষি ও সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক মতবাদের প্রতি আস্থা বেডেন পাওয়েলকে খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। তার প্রভাব রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর রচনার সমসাময়িক কালে ১৯০৭-০৮ সালে বেডেন পাওয়েলের প্রতিষ্ঠিত বয়েস স্কাউটের মধ্যে দেখা যায়।
রুডইয়ার্ডের কিম এককথায় দুটোই আইরিশ এবং তাই খাঁটি ব্রিটিশয়ের থেকে সামাজিক মর্যাদায় অনেক নিচু —এটাই রুডইয়ার্ডের চোখে তাকে সার্ভিস দেওয়ার উপযুক্ত করে। কিম, ক্রেইগটন, মেহেবুব এবং বাবু এমনকী লামা ইত্যাদি চরিত্রগুলো পৃথিবীটা দেখে সেই চোখে, যে চোখে রুডইয়ার্ড কিপলিং দেখেছিলেন। রুডইয়ার্ডের চোখে ভারতবর্ষ সাম্রাজ্যবাদের কাছে অবদমিত একটি দেশ। তার কাছে ভারতবর্ষের পক্ষে এটাই সমীচীন যে ইংল্যান্ডের শাসন মেনে নেওয়া। কিপলিং-এর লেখার যারা ভক্ত, বিশেষ করে মার্কিনি, ইংলিশরা তার রচনায় ভারতবর্ষের বর্ণনা একটা ভৌগলিক পরিসীমার পরিবর্তে—‘একটা সময় সীমাহীন, পরিবর্তনহীন পরিবেশ’ হিসাবে পান যা তাদের চোখে অনেক বেশি কাব্যিক রচনা মনে হয়েছে। কিন্তু তা মনে করলে ভুল হবে। কিপলিং এর লেখায় দুটো বিশেষ ভাব লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ‘কিম’ পড়লে — এটা এক শ্বেত মানুষের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বর্ণনা। অন্যটা হল, একটি বিস্তারিত ঔপনিবেশিক শাসনপদ্ধতি —যার অর্থনীতি, কর্মপদ্ধতি ও ইতিহাস একটা স্বাভাবিক সত্যের মর্যাদায় উঠে এসেছে। যার বৃহত্তর অর্থ হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ঔপনিবেশিক বিভাজনের এক দিকে ইউরোপের বেশির ভাগ সাম্রাজ্যবাদী দেশ যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, ইটালি, রাশিয়া। অন্য দিকে সাম্রাজ্যের প্রাচুর্য, বিভিন্ন বর্ণ, যাদের মনে করা হয় নিচু, পর নির্ভরশীল প্রজা।
কিপলিংএর ভারত পরিবর্তনহীন ভারতবর্ষ। এই চিন্তাধারার মধ্যে প্রাচ্য বাদী উইলিয়াম জোন্স, এডমুন্ড বার্কি, কোলব্রুক, হেনরি মেইন, জেরেমি বেন্থাম, জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিলের রাজনৈতিক দর্শনের প্রভাব পরিষ্কার। যে দর্শনে মনে করা হয় ভারতবর্ষের এবং ইউরোপীয়দের উদ্ভবের আকর একই। তাই প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও তার সংস্কৃতি অনেকটাই উন্নত। কিন্তু যুগের অগ্রগতির সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার অগ্রগতি হয়নি। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি একই জায়গায় এসে থেমে রয়েছে। তাই পরবর্তী কালে জেরেমি বেন্থাম ও তার অনুসরণকারী জেমস মিল, জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন যে ভারতবর্ষকে একটা সুন্দর শাসন ব্যবস্থা দিতে হবে, দিতে হবে একটা সুন্দর আইন। সেটা দিতে একমাত্র ব্রিটিশরাই পারে। তাই ব্রিটিশদের দায়িত্ব তাদের আধুনিক শাসন ব্যবস্থা দিয়ে নতুন আইনকানুনের মাধ্যমে তাদের সভ্য করে তোলা। পরিবর্তন আনতে হবে ভারতীয়দের রুচি এবং সংস্কৃতিতে। সে সময় বম্বেতে জে জে স্কুল অফ আর্ট বা বম্বে স্কুল অফ আর্ট অনেকটা সেই উদ্দেশ্যেই স্থাপনা করা হয় যে, এই ভারতীয়দের রুচিশীল শিল্পকলার সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। এক কথায় বলা যায় ভারতবর্ষে যখন সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ তুঙ্গে তখন রুডইয়ার্ড কিপলিংএর কলম থেকে এমন লেখা বেরিয়ে এসেছে যেগুলো পরবর্তী কালে মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছে।
‘কিম’ উপন্যাসটায় গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লামা চরিত্রটি এক জন ভাল এবং জ্ঞানী মানুষ। তবুও নির্ভর করেন যুবক কিমের উপর, তার দেখানো পথের দিশার উপর, তার বুদ্ধির উপর। এমনকী বেনারসে লামা জাতকের গল্প বলার সময়, যে গল্পে অল্প বয়সী হাতি (ভগবান স্বয়ং) বৃদ্ধ হাতিটিকে (আনন্দ) মুক্ত করছেন—কিমকে ত্রাণকর্তা মনে করছেন।
তার আত্মজীবনীর প্রথম অধ্যায়ের শুরুতে আবার ফিরে এসেছে বম্বের কথা, ফিরে এসেছে ফলের বাজারের কথা। যে বাজারে রুডইয়ার্ড যেতেন আয়ার হাত ধরে প্যারামবুলেটরে বোনকে চাপিয়ে। আরব বণিকদের জাহাজ ভেসে যেত জলে। পারসি অধিবাসীরা আসত সমুদ্রের ধারে অস্তগামী সূর্যকে প্রণাম জানাতে। রুডইয়ার্ড সেই ছেলেমানুষ বয়েসে কিছুই জানতেন না পারসিদের কথা। তিনি লিখছেন বম্বে এসপ্ল্যানেডের তাদের বাড়ির কত কাছে টাওয়ার অফ সাইলেন্সে মৃত দেহ শকুনদের উদ্দেশ্যে রাখার কথা। লর্ড মেয়ো এবং তার নেটিভ দ্বারা হত্যার কথাও ছেলেবেলার স্মৃতিতে উঠে এসেছে।
বাড়ির পাশের বাগানের সবুজের গন্ধ ছাড়িয়ে আর্ট কলেজের তেল রং-এর গন্ধ ভেসে আসত, মাটির দলা দিয়ে ছোটবেলায় খেলা করতেন —‘আই হ্যাভ অলওয়েজ ফেল্ট দ্যা মিনাসিং ডার্কনেস অফ ট্রপিকাল ইভেনটাইডেস, অ্যাজ আই হ্যাভ লভড্ দ্য ভয়েসেস অফ নাইট-উইন্ডস থ্রু পাম অর বানানা লীভস্, অ্যান্ড দ্যা সং অফ দ্যা ট্রি-ফ্রগস’—‘সমথিং অফ মাইসেল্ফ’। যদিও তার ‘হোয়াইট ম্যানস্ বার্ডন’ ভারত বা ভারতীয়দের উপর রচনা নয়, তবুও ভারতের কালা আদমিরা তার স্মৃতির বোঝা বহন করতে চাননি। আগের মতোই সব কিছু আছে, শুধু দিনগুলোই যা বদলে গিয়েছে।