গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কখনও ‘কাশ্মীরিদের বয়কট’-এর ডাক দিয়েছেন। কখনও আবার প্রশ্ন তুলেছেন ‘পশ্চিমবঙ্গে বসে ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন’ কেন? এমনই অজস্র টুইট বিতর্কে জড়িয়েছেন তথাগত রায়। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে বাংলায় বড়সড় পোস্ট। মেঘালয়ের রাজ্যপালের দাবি, ভিডিয়োটি পাকিস্তানের, যাতে দেখা যাচ্ছে মাকে মারধর করে হিন্দু নাবালিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু আদপে সেটি দু’বছরেরও বেশি পুরনো এবং পাকিস্তানের নয়, রাজস্থানের।
টুইটারে ওই ভিডিয়ো পোস্ট হতেই এ রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি নেতার ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন অনেকে। একাধিক সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে খবরও করেছে। কিন্তু তার পরেও অবস্থানে কার্যত অনড় বর্তমানে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়। তাঁর দাবি, তিনি ‘চেক’ করেছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি ঠিক নয়।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক মহিলাকে মারধর করে তাঁর নাবালিকা মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে এক যুবক। তথাগত রায়ের দাবি, ওই নাবালিকা হিন্দু এবং ওই যুবক মুসলমানের এবং ভিডিয়োটি পাকিস্তানের। কিন্তু একাধিক সংবাদমাধ্যমের তদন্তে উঠে এসেছে, ওই ভিডিয়োটি রাজস্থানের। ওই ভিডিয়োর শেযার করে রাজ্যপাল মন্তব্য করেছেন, মুসলিম-খ্রিস্টানদের জন্য বহু দেশ থাকলেও ১৫০ কোটি হিন্দুর জন্য কোনও দেশ নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যোধপুরের বাপ মহকুমার ওই ঘটনা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। শওকত নামে এক স্থানীয় যুবকের সঙ্গে ওই নাবালিকার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু নাবালিকার বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর মা তাঁকে স্বামীর কাছে যেতে দিতে চাইছিলেন না। অবশেষে এক দিন শওকত ও তার বন্ধুরা ওই গ্রামে গিয়ে নাবালিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। বাধা দেওয়ায় নাবালিকার মাকে মারধর করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় শওকতকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং নির্দিষ্ট ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল।
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পর সারা দেশে আক্রান্ত হচ্ছিলেন কাশ্মীরের পড়ুয়ারা। তার পরে পরেই তথাগত রায় টুইটারে কাশ্মীরি এবং কাশ্মীরিদের জিনিসপত্র বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই সময় তীব্র বিতর্ক তৈরি হলেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি তথাগত রায়। আবার এ রাজ্যের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের সময় টুইট করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে সমর্থন কেন? সে নিয়েও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ও নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। তবে সেই সময় অবস্থান কিছুটা নরম করে বলেছিলেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আবার নতুন এই টুইটের যে ধরনের মতাদর্শের কথা বলেছেন তথাগত রায়, তার সমালোচনা করেছেন প্রচুর মানুষ। অনেকে রাজ্যপালকে সরাসরিই আক্রমণ করেছেন। কমেন্ট, রিটুইট করে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু তার পরেও অবস্থান থেকে সরেননি মেঘালয়ের রাজ্যপাল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিতর্কিত টুইট করতেই যিনি অভ্যস্ত, তাঁর হাত থেকে এমন মন্তব্য বা পোস্ট আশ্চর্যের কিছু নয়।