India-Bangladesh Border

কাঁটাতারের জটমুক্তির আশা সীমান্ত বাহিনীর ডিজি বৈঠকে

ফাওজুলের পরেই ভারতে আসার কথা রয়েছে বিজিবি প্রধানের। ফি-বছর বিএসএফ ও বিজিবি-র শীর্ষ কর্তাদের বৈঠক সাধারণত নভেম্বর মাসে হত। এ যাত্রায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ওই বৈঠক ফেব্রুয়ারি মাসে হতে চলেছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২২
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অন্তত ৯২টি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ আটকে রয়েছে। আগামী ১৬-১৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)-র ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে মূলত ওই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে বিজিবি-র শীর্ষ কর্তার ওই সফরের আগেই ‘ইন্ডিয়া এনার্জি উইক, ২০২৫’ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রকের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পরে এটিই সে দেশের কোনও সরকারি প্রতিনিধি দলের প্রথম সফর হতে চলেছে। আগামী ১০-১২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিতে থাকবেন ফাওজুল। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা রয়েছে। সূত্রের মতে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করতেই এ দেশে আসছেন তিনি।

Advertisement

ফাওজুলের পরেই ভারতে আসার কথা রয়েছে বিজিবি প্রধানের। ফি-বছর বিএসএফ ও বিজিবি-র শীর্ষ কর্তাদের বৈঠক সাধারণত নভেম্বর মাসে হত। এ যাত্রায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ওই বৈঠক ফেব্রুয়ারি মাসে হতে চলেছে। এ বার ওই বৈঠক হবে দিল্লিতে বিএসএফের সদর দফতরে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বিএসএফের ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধরি ও বিজিবি-র ডিজি মেজর জেনারেল এম এ সিদ্দিকী। সূত্রের মতে, এ বারের বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে চলতে থাকা সাম্প্রতিক বিবাদ, যার নিরসন করাই মূল লক্ষ্য হবে উভয় পক্ষের।

বিএসএফ সূত্রের দাবি, সব মিলিয়ে ভারত-বাংলাদেশের ৪০৯৬ কিলোমিটার লম্বা সীমান্তের একশোরও বেশি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অতীতে এর মধ্যে ৯২টি স্থানে বেড়া দেওয়া নিয়ে নীতিগত ভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল দু’দেশের সরকার। এগুলির অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গে। কিছু রয়েছে অসম-ত্রিপুরাতে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে ওই জায়গাগুলিতে বেড়া দেওয়ানিয়ে সম্প্রতি আপত্তি জানাতে শুরু করেছে বিজিবি।

Advertisement

বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিজিবি আপত্তি করার পরে এ নিয়ে দু’পক্ষের বৈঠক হয়। তাতে বিজিবি-কে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষ আগেই সমঝোতা সেরে রেখেছে। তাই আপত্তি তোলা ঠিক নয়। কিন্তু বিজিবি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সময় চেয়েছে। আশা করছি, আসন্ন বৈঠকে এ নিয়ে সমঝোতা-সূত্র পাওয়া যাবে।’’

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উভয় দেশই জ়িরো পয়েন্ট থেকে দেড়শো গজ করে ছেড়ে রেখেছে। দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা অনুযায়ী, নিরাপত্তার খাতিরে এ ক্ষেত্রে এক দেশের সীমান্ত থেকে মোট তিনশো গজের মধ্যে কোনও পাকা গাঁথনির কাজ করা যায় না। কিন্তু অনেকগুলি জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের কিছু গ্রাম আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে ছেড়ে রাখা দেড়শো গজের মধ্যে রয়েছে। সেই গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন সময়ে চোরাচালানকারী ও পশুচোরদের উপদ্রবের শিকার হয়ে আসছেন। তাই সীমান্তবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে সীমান্ত থেকে দেড়শো গজের মধ্যে থাকা ভারতীয় গ্রামগুলিকে ‘সিঙ্গল রো ফেন্স’(এক কাঁটাতারের বেড়া) দিয়ে ঘিরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। বিএসএফের দাবি, ওই অনুমতি আগেই নিয়ে রেখেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু সম্প্রতি বিএসএফ সেই কাজই করতে গেলে নদিয়া, মালদহ, কোচবিহারের বিভিন্ন অংশে আপত্তি তোলে বিজিবি। তা গড়ায় কূটনৈতিক চাপানউতোরেও।

বিএসএফের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনকে মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে। তবে কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক জারি রয়েছে। আগামী মাসে ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হল, যে ভারতবাসীরা রোজ চোরাচালানকারীদের উপদ্রবের শিকার হচ্ছেন, যাঁদের ফসল কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, চারপাশে বেড়া দিয়ে তাঁদের সুরক্ষিত করা। একই সঙ্গে অবৈধ যাতায়াত রোখা।’’ এই বিষয়টি ছাড়াও প্রতি বছরের মতোই পশু ও মানবপাচার, জাল নোট, মাদক, বেআইনি অস্ত্র পাচারএবং অপরাধীদের গ্রেফতারির প্রশ্নে সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বৈঠকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement