সঞ্জয় রাউত ও দেবেন্দ্র ফডণবীস
দীর্ঘদিনের জোট ভাঙার পর থেকে দু’দলের নেতাদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বেড়েছে। মুখ দেখাদেখিও প্রায় বন্ধ। সুযোগ পেলেই একে অন্যকে বিঁধে বিবৃতি দিচ্ছেন। এমন আবহের মধ্যেই গত কাল মুম্বইয়ে বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে শিবসেনা মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার নেতা সঞ্জয় রাউতের বৈঠক ঘিরে তুমুল জল্পনা শুরু হয়। শিবসেনা ফের বিজেপি তথা এনডিএ জোটে ফিরতে পারে বলে গুঞ্জনও ওঠে। রবিবার সব জল্পনায় জল ঢেলে দুই নেতার তরফেই অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই বৈঠক ছিল সম্পূর্ণ ‘অরাজনৈতিক’।
আর এই ‘অরাজনৈতিক’ বৈঠকের পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে এনসিপি-প্রধান শরদ পওয়ারের প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠক ঘিরে নতুন করে জল্পনা ছড়ায়। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এই বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবশ্য কিছু বিশদে জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, ধাপে ধাপে লকডাউন তোলার প্রক্রিয়া, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি এবং প্রশাসন সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়েই দুই দলের দুই শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
শনিবার রাতে মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে মুখোমুখি বসেছিলেন দেবেন্দ্র-সঞ্জয়। এমন দিনে দুই নেতার বৈঠক হয়, যে দিন এনডিএ-তে বিজেপির সবচেয়ে পুরনো সঙ্গী অকালি দল জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় প্রস্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে কি সব তিক্ততা ভুলে ফের এক সঙ্গে ঘর বাঁধবে বিজেপি-শিবসেনা? জল্পনা উড়িয়ে সঞ্জয়ের দাবি, শিবসেনার মুখপত্র মরাঠি দৈনিক ‘সামনা’য় ফডণবীসের সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলতেই এই বৈঠক। সঞ্জয় নিজেই ‘সামনা’র প্রধান সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘দেবেন্দ্র ফডণবীস আমাদের শত্রু নন। আমরা ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। সামনায় সাক্ষাৎকারের জন্যই ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করেছি।’’ শিবসেনা প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও এই বৈঠকের বিষয়টি জানেন বলে দাবি করে সঞ্জয় বলেন, ‘‘ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করা কি অপরাধ? উনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আমাদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু আমরা শত্রু নই।’’
কিন্তু এত ব্যাখ্যাতেও প্রশ্ন থামছে কই! এক বছর আগে দু’দলের জোট ভাঙার পর থেকে তিক্ততাই বেড়েছে। জোট ভাঙার পর থেকে প্রায় সব বিষয়েই বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছেন সঞ্জয়। পাল্টা মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে সরকারকে লাগাতার নিশানা করেছে বিজেপি। ফডণবীস-রাউত বাগযুদ্ধ গত এক বছরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু তদন্ত ও কঙ্গনা রানাউতের অফিস ভাঙচুর ঘিরে সেই বিবৃতির লড়াই চরমে উঠেছে। তার মধ্যেই এমন মুখোমুখি বৈঠক তাই জল্পনা বাড়িয়েছে। বিজেপি শিবির থেকেও বলা হচ্ছে, এই বৈঠক নিছকই অরাজনৈতিক ছিল।
মহারাষ্ট্রে বিজেপির নেতা কেশব উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফডণবীসের সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন সঞ্জয়। সেটা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে কথা বলতেই বৈঠকে বসেন দু’জন।’’ সঞ্জয় জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সামনা-র জন্য ফডণবীস ছাড়াও প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাক্ষাৎকারও নেবেন তিনি।