অলোক বর্মার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বৈঠক আজও

এই বুঝি তিনি রাফাল চুক্তিতে সিবিআই তদন্তের এফআইআর দায়ের করে ফেললেন! এই আতঙ্কে বুধবার রাতেই অলোক বর্মার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বৈঠকে বসলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩২
Share:

প্রত্যাবর্তন: সিবিআই সদরে অলোক বর্মা। বুধবার। পিটিআই

এই বুঝি তিনি রাফাল চুক্তিতে সিবিআই তদন্তের এফআইআর দায়ের করে ফেললেন! এই আতঙ্কে বুধবার রাতেই অলোক বর্মার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বৈঠকে বসলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

সূত্রের খবর, বর্মাকে এক দিনের জন্যও সিবিআইয়ের শীর্ষ পদে রাখার ঝুঁকি নিতে নারাজ মোদী সরকার। সেই কারণেই বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে বিচারপতি এ কে সিক্রি এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে নিয়ে তৈরি তিন সদস্যের কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। মল্লিকার্জুনের চাপের মুখে সেই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার ফের বৈঠক হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বর্মাকে ডিরেক্টর পদে পুনর্বহাল করলেও এই কমিটির হাতে তাঁর ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিয়েছিল। রায়ে বলা ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি বর্মাকে সরাতে হয়, সে ক্ষেত্রে কমিটিই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। বর্মা ফেরায় রাফাল নিয়ে আশা দেখছিল কংগ্রেস। চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবিতে সিবিআইয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। বুধবারের বৈঠক নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাফাল নিয়ে এফআইআর আটকাতে সরকারের মরিয়া ভাব দেখে অবাক হচ্ছি।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, আধ ঘণ্টার বৈঠকে বর্মার বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধ অবস্থান নেন খড়্গে। সিভিসি-র যে সুপারিশের ভিত্তিতে বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল, সেই রিপোর্ট দাবি করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বর্মার বক্তব্যও শুনতে হবে। পাশাপাশি খড়্গে যুক্তি দেন, সিবিআই ডিরেক্টরের মেয়াদ ২ বছর বাঁধা রয়েছে। বর্মা ৩১ জানুয়ারি অবসর নেবেন। কিন্তু মাঝে যে ৭৭ দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন, তা পূরণ করতে হবে। ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর ঘটনারও তদন্ত দাবি করেন তিনি। এ দিনই বর্মাকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, সেই আশায় রাত পর্যন্ত কর্মিবর্গ দফতরের অফিসারদের অফিসে থাকতে বলা হয়েছিল। শেষে বৈঠকে ঐকমত্য না-হওয়ায় তাঁরা ছুটি পান।
বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত খারিজ করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছিল, সিবিআই ডিরেক্টরের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাছাই কমিটি। সুপ্রিম কোর্ট কমিটির বৈঠক ডাকার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল। খড়্গের দাবি ছিল, শুক্রবার এই বৈঠক ডাকা হোক। কারণ কোর্টের রায় পড়ার জন্য সময় দরকার। তা ছাড়া বৈঠক ডাকা হলেও তা বর্মাকে নিয়ে, না তাঁর উত্তরসূরি ঠিক করার জন্য— সেই আলোচ্যসূচিও জানানো হয়নি বলে আপত্তি তোলেন তিনি।
কিন্তু বুধবার সকালেই সিবিআইয়ের সদর দফতরের বারো তলায় ডিরেক্টরের অফিসে পৌঁছে যান অলোক বর্মা। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দফতরে পৌঁছন এ কে বস্‌সি, এম কে সিন্‌হার মতো ‘ঘনিষ্ঠ’ অফিসারেরা— বর্মাকে সরানোর পরেই যাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। এই অফিসারেরাই তদন্ত করছিলেন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে। বর্মা তাঁদের অধিকাংশেরই বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করেন। এতেই রক্তচাপ বেড়ে যায় সরকারের। তাই খড়্গের দাবি খারিজ করে বুধবারই কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। যুক্তি দেওয়া হয়, সুপ্রিম কোর্ট বর্মাকে পুনর্বহাল করলেও তাঁর কাজকর্মে গণ্ডি টেনে দিয়েছে। তাতে সিবিআইয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।
বর্মাকে ফেরানোর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। তাই উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে তিনি নিজে না-থেকে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি এ কে সিক্রিকে নিজের প্রতিনিধি মনোনীত করেন। প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের মতে, ‘‘প্রধান বিচারপতির উচিত ছিল পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদেকে মনোনীত করা। বিচারপতি সিক্রি কিছু দিনের মধ্যেই অবসর নেবেন। তাঁকে পাঠানো ঠিক হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement