নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। বড় হয়ে ভাল চাকরি করবে, ছেলের ভবিষ্যত্ নিয়ে দিনরাত ভাবতেন বাবা। অঙ্কে স্নাতক হওয়া সেই ছেলেই যে ‘কৃষ্ণের অবতার’ হয়ে উঠবেন, তা কি তিনি ভেবেছিলেন!
আসল নাম বিজয় কুমার। ১৯৪৯ সালে ৭ মার্চ তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলার একটা ছোট গ্রাম নাথামে জন্ম তাঁর।
বাবা শ্রী ভারাদারাজুলু ভারতীয় রেলের হেড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। আর মায়ের জীবন ছিল সংসারেই আবদ্ধ।
মাত্র ছ’বছর বয়সে বিজয় কুমার পরিবারের সঙ্গে চেন্নাই চলে আসেন। প্রথমে ডন বসকো স্কুল, পরে চেন্নাইয়ের বৈষ্ণব কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হন তিনি।
১৯৭৫ সালে পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দূর সম্পর্কের আত্মীয় পদ্মাবতীকে বিয়ে করেন তিনি। বাবার ইচ্ছামতো লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশনে ক্লার্কের পদে যোগ দেন।
সেই ছাপোষা ছেলেই যে একদিন নিজেকে কৃষ্ণের দশম অবতার হিসাবে ঘোষণা করে দেবেন, তা কেউই ভাবতে পারেননি তখন।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। এলআইসি-র কাজ পেয়ে সস্ত্রীক কোয়ম্বত্তুরে চলে আসেন তিনি। বিজয়ের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ১৯৮২ সাল।
স্কুলের বন্ধু শঙ্কর পশ্চিম জার্মানি থেকে পদার্থবিদ্যায় গবেষণা সম্পূর্ণ করার পর ফিরে আসেন দেশে। দুই বন্ধু মিলে চিত্তুরে একটি স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
এই চিত্তুরে থাকাকালীনই ক্রমে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। স্কুল বন্ধ করে আধ্যাত্মিক পাঠ দেওয়ার ওয়াননেস ইউনিভার্সিটি খোলেন তিনি।
নব্বইয়ে দশকে তিনি নিজেকে কৃষ্ণের দশম অবতার ‘কল্কি’ হিসাবে ঘোষণা করেন। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটকে তাঁর প্রচুর আশ্রম রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশেও তাঁর যাতায়াত রয়েছে।
তাঁর ভক্তের সংখ্যা যত বেড়েছে, অর্থে, সম্পত্তিতে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র বিজয়ের স্ত্রী, পদ্মাবতী (পদম আম্মা)-র দর্শনের জন্যই প্রতি শিষ্যকে পাঁচ হাজার টাকার অগ্রিম টিকিট বুক করতে হয়। বিশেষ দর্শনের জন্য দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা!
বিদেশি ভক্তদের জন্য ২১ দিনের প্যাকেজ রয়েছে। আশ্রমে প্রবেশের জন্য প্রতি ভক্তের আলাদা এন্ট্রি ফি-ও রয়েছে।
কল্কি ট্রাস্টের ন’রকমের ব্যবসা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল রিয়েল এস্টেট। বিজয়ের ছেলে কৃষ্ণ রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে এখনও পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।
জমির জবরদখল, ড্রাগ এবং যৌন ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে তাঁর আশ্রমের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তাঁর বিভিন্ন আশ্রমে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কয়েকশো কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি উদ্ধার করেছে পুলিশ।