সচিন বনসল। অনলাইন সংস্থা ফ্লিপকার্টের প্রতিষ্ঠাতা। তবে এই মুহূর্তে তাঁর পরিচয়টা বদলে গিয়েছে। তিনি এখন আর ফ্লিপকার্টের সঙ্গে যুক্ত নন।
তার চেয়েও বড় বিষয় হল, এই মুহূর্তে তাঁকে নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে। কারণ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন তোলপাড় করা একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নিজের হাতে তৈরি করা ফ্লিপকার্ট কেন তিনি ছেড়ে দিলেন? কেনই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে?
১৯৮১ সালের ৫ অগস্ট চণ্ডীগড়ে জন্ম সচিন বনসলের। সচিনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী আর মা পুরোদস্তুর সংসারি মহিলা।
২০০৫ সালে দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক হন তিনি। প্রথম থেকেই অনলাইন গেমের প্রতি তাঁর তীব্র ঝোঁক ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ও বনসল ভেবেছিলেন পড়া ছেড়ে অনলাইন গেম নিযে কাজ শুরু করবেন।
পরিবারের চাপে তা আর করে ওঠা হয়নি। স্নাতক হয়েই বনসল টেকস্প্যান নামে একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
কিন্তু বেশি দিন অন্যের অধীনে কাজ করা তাঁর পছন্দ ছিল না। এক বছরের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেন। নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
ওই বছরই দেশীয় অনলাইন সংস্থা ফ্লিপকার্ট আসে। বিনি বনসলের সঙ্গে জোট বেঁধে ফ্লিপকার্ট বাজারে আনেন সচিন বনসল। তবে সে সময় ফ্লিপকার্ট শুধুমাত্র অনলাইন বুকস্টোর ছিল। চার লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা।
বেঙ্গালুরুর কোরামঙ্গলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু হয় ব্যবসা। শূন্য থেকে একেবারে নিজের হাতে ফ্লিপকার্ট গড়ে তুলেছিলেন সচিন। ওয়েবসাইট বানানো, বই জোগার করা, অর্ডার নেওয়া এবং সেই অর্ডার প্যাকেজিং করে ডেলিভারি দেওয়া— প্রথম প্রথম সবটা একাই সামলাতেন তিনি।
কিন্তু তার পর কী এমন হল যে নিজের হাতে গড়ে তোলা ব্যবসা অন্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে ফ্লিপকার্ট থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন তিনি?
২০১৬ সালে বনসল ফ্লিপকার্টের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি এই সংস্থার এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান হন। কিন্তু তারপরই ফ্লিপকার্ট থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।
২০১৮ সালে কোনও অজ্ঞাত কারণে মার্কিন সংস্থা ওয়ালমার্টের সঙ্গে হাত মেলান তিনি। নিজের সমস্ত শেয়ার ওয়ালমার্টকে বেচে দিয়ে ফ্লিপকার্ট থেকে হাত তুলে নেন।
২০১৮ সালে বিএসি অ্যাকুইজিশন প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১৯ সালে ওলা ক্যাব-এ ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। এ ছাড়াও গ্রে অরেঞ্জ, আথার এনার্জি, ইনশর্টস, আনঅ্যাকাডেমি এবং টিমইন্ডাস এ রকম বহু সংস্থায় বিনিয়োগ করেছেন।
এরই মধ্যে সচিনের ব্যক্তিগত জীবনেও খাঁড়া নেমে আসে। তাঁর স্ত্রীর নাম প্রিয়া বনসল। তিনি পেশায় দাঁতের চিকিৎসক। তাঁদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
প্রিয়ার সঙ্গেও সচিনের সম্পর্ক খুব একটা ভাল যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সচিনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং পণ নিয়ে হয়রানির অভিযোগ আনেন তাঁর স্ত্রী।
অভিযোগ, সচিন নাকি দীর্ঘ দিন ধরেই স্ত্রীকে মারধর করছিলেন। স্ত্রীর সমস্ত সম্পত্তি তাঁর নামে করার জন্য তাঁকে মানসিক চাপও দিচ্ছিলেন। এমনকি স্ত্রীর বোনকে যৌন নির্যাতনও করার অভিযোগও করেছেন তিনি। ২৮ ফেব্রুয়ারি কোরামঙ্গল থানায় এই অভিযোগ জানান স্ত্রী প্রিয়া।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে সচিনকে এখনও জেরা করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।