প্রীতপাল কৌর। নাগাল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত জেলায় কর্মরত এক আইপিএস অফিসার। প্রত্যন্ত জেলায় থেকেও আজ সারা দেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের শিক্ষা, ইচ্ছাশক্তি এবং শ্রম কাজে লাগিয়ে নাগাল্যান্ডের ‘ঘরের মেয়ে’ হয়ে উঠেছেন।
শুধুমাত্র আইপিএস হিসাবে প্রীতপালকে সম্বোধন করলে একটু কমই বলা হয়। তিনি একাধারে চিকিৎসক, কাউন্সিলর এবং শিক্ষকও।
প্রীতপাল প্রকৃতপক্ষে হরিয়ানার মেয়ে। সেখানেই ছেলেবেলা কেটেছে। সেখানকার স্কুলে পড়াশোনা এবং তারপর দাঁতের চিকিৎসক হয়ে রোগীদের দেখভাল। এ ভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু সমাজের জন্য আরও বেশি কিছু করতে চাইছিলেন তিনি।
সেই নেশাতেই ইউপিএসসি-র জন্য নিজেকে তৈরি করতে শুরু করলেন। ২০১৬ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। নাগাল্যান্ডের প্রত্যন্ত জেলা নোকলাকের পুলিশ সুপার হিসাবে নিযুক্ত হন।
এ রকম অঞ্চলে গিয়ে কাজ করে বেশিরভাগই খুশি হন না। বদলির জন্য দরখাস্ত করে থাকেন। প্রীতপাল কিন্তু সেই অর্থে ভিন্ন। বদলির চেষ্টা তো করেননি, উপরন্তু সেই প্রত্যন্ত জেলাকেই নিজের সব টুকু উজাড় করে দিচ্ছেন।
জেলার পরিকাঠামোর উন্নয়নই শুধু নয়, তিনি এলাকার কিশোর-কিশোরীদেরও বিনামূল্যে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য পড়ান। তাঁদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন নেটমাধ্যমে।
কয়েকজন পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসার এবং প্রশাসনিক প্রধানকেও বিনামূল্যে টিউশন দিতে রাজি করিয়েছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের একটি ঘর তিনি শ্রেণিকক্ষে পরিণত করেছেন।
সম্প্রতি তাঁর কোচিংয়ের সাত জন পড়ুয়া রাজ্য সিভিল সার্ভিস-এর প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ক্লাসে ৩০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই আবার কিছু না কিছু কাজ করেন। তাঁদের জন্য সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আলাদা করে ক্লাস নেন তিনি।
নাগাল্যান্ডের নোকলাকের গা ঘেঁষে রয়েছে মায়ানমার। ভারতের প্রত্যন্ত জেলা এটি। ফলে পরিকাঠামোর উন্নয়ন সে ভাবে হয় না এখানে। নিজের মাইনের একটা অংশও তিনি কোচিং ক্লাস চালানোর কাজে ব্যয় করেন।
শুধু শিক্ষার দিকেই পিছিয়ে নেই নোকলাক। সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানে মাদকের রমরমাও অত্যন্ত বেশি। কম বয়সি ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সেই জগৎ থেকেও তাঁদের আলোয় নিয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রীতপাল। নিজে তাঁদের কাউন্সেলিং করান, ওষুধও লিখে দেন।
নাগাল্যান্ডের নোকলাক এখন তাঁর পরিবার। তাঁর আরও একটি পরিবার রয়েছে। তিন হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছেন তাঁর স্বামী। বছরে মাত্র কয়েকটা দিনই দেখা হয় তাঁদের। দূরে থেকেও স্বামীকে সব সময় পাসে পেয়েছেন প্রীতপাল। স্বামী এবং পরিবারের সকলের সমর্থন ছাড়া স্বপ্নপূরণ অসম্ভব ছিল, মনে করেন তিনি।