জল নেই, টাকা নেই, চাষাবাদের জন্য জমিও নেই। ছিল শুধু দারিদ্রতা।
সেই গ্রামেরই ভোল সম্পূর্ণ বদলে দিলেন গ্রামপ্রধান বা সরপঞ্চ। খরা বিধ্বস্ত, দরিদ্র সেই গ্রাম আজ হয়ে উঠেছে ভারতের রোল মডেল।
গ্রামটির নাম হিবরে বাজার। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার একটি গ্রাম। উন্নয়নের আদর্শ নমুনা এই গ্রাম এখন মডেল ভিলেজের সম্মান পেয়েছে।
সম্পূর্ণ ইচ্ছা এবং বুদ্ধির বলে যাঁর হাত ধরে বদলে গিয়েছে গ্রামটি, তিনি হলেন পোপটরাও বাগুজি পওয়ার। এই গ্রামের সরপঞ্চ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করল তাঁকে।
পোপটরাওয়ের জন্ম ১৯৬০ সালে এই হিবরে বাজারেই। বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। ১৯৮৯ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই গ্রামের সরপঞ্চ নির্বাচিত হন। পোপটরাও যে সময় সরপঞ্চ হয়েছিলেন, তখন গ্রামের খুবই দুর্দশা চলছিল।
দুর্দশা এতটাই ছিল যে, গ্রাম ছেড়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। গ্রামের ১১টি পরিবার মুম্বই বা পুণেতে পাড়ি দেয় কাজের খোঁজে।
গ্রামে যাঁরা পড়েছিলেন, তাঁদেরও হাতে কোনও কাজ ছিল না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে খরার প্রকোপে থাকা গ্রামে চাষাবাদ হত না।
খরার জন্য ঘাসের উত্পাদনও কমে গিয়েছিল। যার ফলে খাদ্যের অভাবে গবাদি পশুরাও মারা যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় বেকার গ্রামবাসীদের মধ্যে চোলাই মদ তৈরির প্রবণতা বাড়ছিল।
গ্রামের প্রায় সমস্ত বেকার যুবকেরা চোলাইয়ে আসক্ত হয়ে পড়তে শুরু করেন। এর ফলে গ্রামে অপরাধের হারও বাড়ছিল। গ্রামের সমস্ত পরিবারই দারিদ্রসীমার নীচে ছিল।
১৯৮৯ সালে গ্রামের দায়িত্ব হাতে নিয়েই প্রথমে কতগুলো পরিকল্পনা করেন পোপটরাও। পরিকল্পনার প্রথমেই ছিল জল সঞ্চয়। মুম্বই এবং পুণে থেকে আসা মোট এক লাখ ২৫ হাজার লিটার জল দৈনিক সঞ্চয় করতে শুরু করেন তিনি। তার পাশাপাশি বৃষ্টির জল ধরে রেখে শুরু হয় কৃষিকাজ।
গ্রামে জলের অভাব দূর হলে কৃষিকাজ শুরু হয়, তাতে বেকার সমস্যার অনেক সমাধান হয়। তার উপর জল পেয়ে ঘাসও জন্মাতে শুরু করে। ফলে গবাদি পশুদের খাদ্যের অভাব মুক্ত হয়। একে একে গ্রামে ফিরে আসতে শুরু করেন চলে যাওয়া গ্রামবাসীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে কৃষকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
কৃষির পাশাপাশি এই গ্রামের আয়ের অন্যতম উত্স পশুপালন। ১৯৮৯ সালের আগে যেখানে প্রতিদিন মাত্র দেড়শো লিটার দুধ উত্পাদন হত, তা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে বেড়ে হয় প্রায় পাঁচ হাজার লিটার।
গ্রামের উন্নয়নের জন্য তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণে জোর দেন। অযথা গাছ কাটা একেবারে বন্ধ করে দেন। আর গ্রামের সমস্ত মদের দোকান বন্ধ করে দিয়ে মদ্যপান নিষিদ্ধ করে দেন।
বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও নজর দেন তিনি। জঞ্জাল সাফ করে গ্রামটাকে ঝকঝকে করে তুলেছিলেন। গ্রামে একটা মশা খুঁজে দিতে পারলে তাঁকে একশো টাকা দেওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন।
ক্রমশ উন্নয়নের দিকে এগোতে এগোতে বর্তমানে ভারতের মডেল গ্রাম হয়ে উঠেছে এই হিবরে বাজার। ২০০৭ সালে প্রথম জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয় পোপটরাওকে। তারপর একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মুকুটে সর্বশেষ পালকটি হল পদ্মশ্রী সম্মান।