হরিয়ানার মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে পূজা। কঠোর পরিশ্রম এবং মেধার জোরে পেয়েছিলেন বিদেশে উচ্চপদস্থ চাকরি। গ্রামের সবাই তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর উত্থান দেখে। মা-বাবাকে গর্বিত করে পাড়িও দিয়েছিলেন বিদেশ।
সেই মেয়েই আরও এক বার গ্রামের সকলকে তাজ্জব করে দিল। বিদেশের বিলাসবহুল জীবনকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেশে ফিরে এসে।
তিনি আইপিএস অফিসার পূজা যাদব। ১৯৮৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হরিয়ানায় জন্ম পূজার। হরিয়ানার স্কুলের পড়াশোনা। স্কুল পাশের পর বায়োটেকনোলজি এবং ফুড টেকনোলজি নিয়ে এমটেক করেছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই প্রথমে কানাডা এবং পরে জার্মানিতে কাজ পান।
কর্মসূত্রে কয়েক বছর এই দুই দেশে কাটিয়েছেন। মোটা মাইনের চাকরি, বিলাসবহুল জীবনযাপন— কোনও অভাব ছিল না পূজার জীবনে। কিন্তু এত কিছুর পরও একটা খটকা যেন ক্রমশ ভিড় করছিল তাঁর মনে। সেই কারণে বিদেশে মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে পিছপা হননি তিনি।
বারবারই পূজার মনে হত, তাঁর শিক্ষা-শ্রম তিনি নিজের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছেন না। তার বদলে অন্য দেশের উন্নয়ন করছেন। এই বিষয়টিই তাঁকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছিল। ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার মনস্থির করে চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন পূজা।
ইউপিএসসি-র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেছিলেন দেশে ফিরেই। কিন্তু প্রথম চেষ্টায় সাফল্য পাননি। নিজের খামতিগুলোকে চিহ্নিত করে দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যান। ২০১৮ সালে আইপিএস অফিসার হিসাবে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পান।
বরাবরই মেধাবী ছিলেন। তাই ছোট থেকেই কেরিয়ার নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন পূজা। তা বলে জীবনে প্রথম থেকেই সব কিছু মসৃণ ছিল না। পরিবারের সমর্থন সব সময়ই পেয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই একটা ময়ের পর নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়েছিল।
তিনি টিউশন করাতেন। এমটেকের খরচ সামলাতে রিসেপশনিস্টের কাজও করেন।
শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, উচ্চাশার কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের থেকেও এক সময় কুকথা শুনতে হয়েছে। হাল ছাড়েননি পূজা। এগুলিই যেন তাঁকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তাঁকে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল। তাঁর মতো ইউপিএসসি-র স্বপ্ন দেখা তরুণ-তরুণীদেরও কোনও পরিস্থিতিতেই হাল না ছাড়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পূজা এখন গুজরাতে কর্মরত। ২০২১-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি আইএএস বিকল্প ভরদ্বাজের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিকল্প ২০১৬ সালে কেরলে আইএএস হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বিয়ের পর তিনিও গুজরাতে বদলি নিয়েছেন।