National news

সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার কাহিনি, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হাজারেরও বেশি প্রাণ বাঁচিয়েছেন ইনি

টায়ার সারানোর পাশাপাশি তিনি জীবনও বাঁচান। এতদিনে প্রায় এক হাজার ১৮০টি প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। কী ভাবে?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ১১:৪৬
Share:
০১ ১৫

রাজস্থানে ৬৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ছোট একটা দোকান চালান পীরারাম বিষ্ণোই। মূলত গাড়ির টায়ার সারান তিনি। সারাদিনে যা উপার্জন হয়, খাওয়ার খরচেই প্রায় সবটা লেগে যায়। এই অতি সাধারণ মানুষটির একটি অসাধারণ কাহিনি রয়েছে।

০২ ১৫

টায়ার সারানোর পাশাপাশি তিনি জীবনও বাঁচান। এতদিনে প্রায় এক হাজার ১৮০টি প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। কী ভাবে?

Advertisement
০৩ ১৫

পশ্চিম রাজস্থানের খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম পীরারামের। তাঁর বাড়ির একদিকে ভারতের গুজরাত আর একদিকে পাকিস্তানের সীমানা। এই এলাকার পাশেই ছিল ঘন জঙ্গল।

০৪ ১৫

বাবা সামান্য চাষি ছিলেন। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মাঠে চাষাবাদের কাজ করতেন পীরারাম। মাঝে মধ্যেই সেই জঙ্গল থেকে ময়ূর, খরগোশ, হরিণ বেরিয়ে চাষের জমিতে চলে আসত। কখনও ফসল নষ্ট করত, আবার কখনও জমিতে খেলে বেড়াত তারা।

০৫ ১৫

পীরারাম খুব অবাক হয়ে দেখতেন, ফসল নষ্ট করলেও তাঁর বাবা কখনও সেই সব প্রাণীদের তাড়িয়ে দিতেন না। উত্তরে তাঁকে বাবা বলেছিলেন, এই প্রাণীগুলো না থাকলে মানুষও বাঁচতে পারবে না।

০৬ ১৫

এর পর অনেক বছর কেটে গিয়েছে। পীরারামের বয়স বেড়েছে। ৬৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে টায়ার মেরামতির একটি দোকান খুলেছেন।

০৭ ১৫

গাড়ি চালকের থেকে প্রথমে জানতে পারেন, মাঝেমধ্যেই রাস্তা পার করতে গিয়ে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় বন্যপ্রাণীদের। পীরারামের দোকানের ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে জঙ্গল। অথচ সেখানে কোনও রক্ষী ছিল না।

০৮ ১৫

সে দিনই প্রথম নিজেকে অসহায় লেগেছিল পীরারামের। তাঁর একার পক্ষে কী ভাবে এই বন্য প্রাণীগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এ রকমই একদিন বাড়ি থেকে দোকানে যাওযার সময় তাঁর সামনেই একটি হরিণের মোটরবাইকে দুর্ঘটনা ঘটে।

০৯ ১৫

প্রায় মরতে বসেছিল হরিণটি। কোনওক্রমে নিজেকে টেনে রাস্তার পাশে নিয়ে গিয়েছিল। পীরারামের ব্যথিত হৃদয় তা চোখের সামনে দেখতে পারছিল না। হরিণটিকে কোলে তুলে নিয়ে একটি গাড়ি থামিয়ে তিনি পশু চিকিত্সালয়ে নিয়ে যান। নিজে সমস্ত খরচ করেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন তাকে।

১০ ১৫

এর পর থেকে যখনই কোনও আহত পশুর কথা শুনতেন বা দেখতে পেতেন, তাকে নিজের বাড়িতে এনে চিকিত্সা করতেন পীরারাম। তাঁর পরিবারও তাঁকে সাহায্য করতেন।

১১ ১৫

২০১২ সালের ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন তিনি নিজের একটি সংগঠন তৈরি করেন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন আরও কয়েক জন সমাজকর্মী। তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর এবং আশেপাশের গ্রামের লোকেরাও অসুস্থ বা জখম প্রাণী দেখলেই তাঁর কাছে নিয়ে আসতে শুরু করেন।

১২ ১৫

তবে খারাপ লোকেরও অভাব নেই। একসময় তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে বন্যপ্রাণী ঘরে রাখার অভিযোগ জমা পড়ে। পর দিনই বন দফতরের লোকেরা তাঁর বাড়িতে এসে হাজির।

১৩ ১৫

পীরারাম বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের প্রতি তাঁর এবং তাঁর পরিবারের ভালবাসা দেখে বনবিভাগের অফিসাররা তাঁকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। সরকারি একটি জমি তাঁকে পাইয়ে দেন তাঁরা।

১৪ ১৫

ওই অঞ্চলের রক্ষী করে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ১৮০টি প্রাণীকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। ক্রমে পীরারাম আড়াই হেক্টর এলাকা জুড়ে বন্যপ্রাণীদের জন্য আশ্রয় গড়ে তোলেন। সেখানে বর্তমানে প্রায় চারশো আহত প্রাণী রয়েছে। বাকিদের সুস্থ করে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

১৫ ১৫

আগে একাই এই রাস্তায় হাঁটতেন পীরারাম। এখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন প্রায় দু’হাজার মানুষ। বন্যপ্রাণীদের জন্য গড়ে তোলা এই ফার্মের দেখাশোনা করা, পশু পাচার রোখার মতো নানা কাজকর্মে লিপ্ত তাঁরা। সরকারি এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাহায্যও আসতে শুরু করেছে। প্রতি মাসে ফার্ম চালাতে খরচ হয় এক লাখ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement