মঙ্গলা মানি, ইসরোর একমাত্র মহিলা বিজ্ঞানী যিনি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পরিবেশে এক বছরেরও বেশি দিন কাটিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। মনের জোর থাকলে বয়স যে কোনও বাধা হতে পারে না, তা প্রমাণ করেছেন তিনি।
ইসরোর ২৩ জনের একটি দল ২০১৬ সালে অ্যান্টার্কটিকায় যায়। সেই দলেই একমাত্র মহিলা ছিলেন ৫৬ বছরের মঙ্গলা মানি। অ্যান্টার্কটিকার হিমাঙ্কের ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তিনি ৪০৩ দিন কাটিয়ে এসেছেন।
এর আগে যতবার এই অভিযান হয়েছে, কোনও বারই কোনও মহিলা শারীরিক দক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। মঙ্গলাই প্রথম মহিলা, যিনি শারীরিক এবং মানসিক সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
অ্যান্টর্কটিকায় ভারতীয় আর্থ স্টেশনেই তাঁদের কাজ ছিল। হায়দরাবাদ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার থেকে যেখানে মাত্র দুটো অরবিট নিরীক্ষণ করা যায়, সেখানে এখান থেকে ১৪টা অরবিট নিরীক্ষণ করা সম্ভব।
মঙ্গলাদের কাজ ছিল, সেই সব তথ্য সংগ্রহ করে হায়দরাবাদে পাঠানো। তাঁদের আগেও একটি দল এই কাজ করে গিয়েছে। তাঁরা অ্যান্টার্কটিকা ছাড়ার আগে যেমন অন্য একটি দল সেখানে পৌঁছেছে। শুধু ভারতই নয়, রাশিয়া, চিনেরও একই রকম স্পেস সেন্টার রয়েছে অ্যান্টর্কটিকায়।
মঙ্গলা জানিয়েছেন, সেখানে পৌঁছনোর আগে দিল্লির এইমসে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। দু’সপ্তাহ তাঁকে নয় হাজার ফুট উচ্চতায় উত্তরাখণ্ডের অউলি এবং ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় বদ্রীনাথে কাটাতে হয়েছে। সারাদিন পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে ট্রেক করতে হয়েছে।
২০১৬ সালে তাঁদের দলকে অ্যান্টর্কটিকায় পৌঁছে দেওয়া হল। মঙ্গলা জানিয়েছেন, এতটাই ঠান্ডা ছিল যে, ক্যাম্পের বাইরে বিশেষ পোশাক পরেও দুই ঘণ্টার বেশি থাকা যেত না। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছিলেন। বিনোদনের জন্য মাঝে মধ্যে চিন-রাশিয়ার দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতারও ব্যবস্থা করেছিলেন।
গ্রীষ্মকালে বরফ গললে খাবার দিয়ে যেত জাহাজ। তাঁরা যা খেতেন সেগুলোই সরবরাহ করা হত। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, সব্জি, ফল, প্যাকেটজাত বিভিন্ন খাবার, দুধ, মাখন, পাউরুটি, জ্যাম, মিষ্টি সবই তাঁদের যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করা হত।
তবে কেউই যেমন খুশি খেতে পারতেন না। হিসাব করে খেতে হত। কারণ, শীতকালে এই হিমভূমির বাকি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে খাবার অহেতুক নষ্ট করলে পরে নিজেদেরই ভুগতে হবে, একটি সাক্ষাত্কারে জানান মঙ্গলা।
ছোট থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল মঙ্গলার। হায়দরাবাদের সৈফাবাদে বড় হয়েছেন তিনি। সেখানেই পড়াশোনা। ইসরোর প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হন। কিন্তু বাবা-মা মেয়েকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না।
পুলিশের ডেপুটি সুপার কাকার কথাতেই বাবা-মা অবশেষে রাজি হন। সেই শুরু। তারপর হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারে কাজে যোগ দেন। বিশ্বের রিসোর্স ডেটা স্যাটেলাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন। মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্নও পূর্ণ হয় তাঁর।
মঙ্গলা এখন ইসরোর অন্য মহিলা বিজ্ঞানীদের কাছে অনুপ্রেরণা। মঙ্গলা সফল ভাবে ফিরে আসার পর সম্প্রতি ইসরোর অন্য এক মহিলা বিজ্ঞানীও প্রস্তুতি শুরু করেছেন অ্যান্টার্কটিকা যাওয়ার।