এমবিএ করেছিলেন। আকর্ষণীয় চাকরিও পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোটা মাইনের সেই চাকরি অন্য অনেকের কাছে লোভনীয় হলেও তাঁর কাছে ছিল না। তাঁর মন বরং পড়েছিল চালচুলোহীন শিশুগুলোর কাছে।
তাই চাকরি ছেড়ে তাদের কাছেই ছুটে গিয়েছেন তিনি। ১২০০ অনাথ শিশুর মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন প্রতি মাসে।
হায়দরাবাদের ওই যুবকের নাম খওয়াজা মইনুদ্দিন। ৩৯ বছর বয়সে বহুজাতিক সংস্থার কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল ‘ক্ষুধা মুক্ত ভারত’-এর স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা।
খওয়াজা ২০১৭ সালে প্রথম এই পরিকল্পনা শুরু করেন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। শ্রীনাথ রেড্ডি এবং ভগত রেড্ডি। তাঁরা তিন জন স্থির করেন, এই সংক্রান্ত একটা ইউটিউব চ্যানেল খোলার।
‘নবাব’স কিচেন ফুড অফ অল অরফ্যানস্’ নামে ওই ইউটিউব চ্যানেলে অনাথ শিশুদের জন্য খাবার বানানো থেকে তাদের পরিবেশন করা, সবটাই দেখানো হয়। ১০ লক্ষেরও বেশি সাবস্কাইবার রয়েছে চ্যানেলটির।
মইনুদ্দিনই যাবতীয় রান্নার দায়িত্বে ছিলেন। আর দর্শকদের কাছে ভিডিয়ো পৌঁছনোর জন্য তাঁর দুই বন্ধু ক্যামেরার পিছনে লাগাতার কাজ করেন।
ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক, চাউমিন, বিরিয়ানি, পাউভাজি, তন্দুরি চিকেন— প্রতি দিন অনাথ শিশুগুলোর মুখো নানা রকম সুস্বাদু খাবার তুলে দেন তিনি। রান্নার বই দেখে খাবার বানান।
কিন্তু ভাগ্য সব সময় সঙ্গ দেয় না। প্রতি মাসে হায়দরাবাদ জুড়ে ১২০০ শিশুর কাছে সুস্বাদু খাবার পৌঁছনোর খরচ অনেক। একটা সময় আসে যখন খরচের ধাক্কায় তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে যায়। ভিডিয়ো আপলোডও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
তখন তাঁদের চ্যানেলের এক সাবস্ক্রাইবার পরবর্তী ভিডিয়ো কবে আসবে তাঁদের কাছে জানতে চান। নিজেদের অসুবিধার কথাও তাঁরা খোলাখুলি তাঁকে বলেন।
দেশকে ক্ষুধা মুক্ত করার যে স্বপ্ন মইনুদ্দিন দেখেছিলেন, তা ভেঙে পড়তে দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শেষে ওই সাবস্ক্রাইবারের পরামর্শেই যেন ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা।
ওই ব্যক্তি অন্য সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকেই অর্থ সাহায্যের আবেদন করতে জানান। মইনুদ্দিনরাও ঠিক করেন শেষ একটা ভিডিয়ো তাঁরা চ্যানেলে আপলোড করবেন। যার বিষয়বস্তুই হবে তাঁদের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে সাহায্যের আবেদন করা।
এত দ্রুত যে ফল মিলবে, তা ভাবতেই পারেননি তাঁরা। নতুন ভিডিয়ো আপলোড করার এক ঘণ্টার মধ্যেই ১৮ জন তাঁদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি মইনুদ্দিনদের।
চাকরি ছেড়ে কেন এই পরিকল্পনা? মইনুদ্দিন জানাচ্ছেন, “আমি যখন ট্রেনে করে অফিসে যেতাম, দেখতাম প্ল্যাটফর্মে অনেক শিশু ডাস্টবিন থেকে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এই স্মৃতি আমাকে তাড়া করছিল। কাজে মন লাগত না।”
সাবস্ক্রাইবারদের থেকে সাহায্য পাওয়ার পর যে চলার পথ খুব মসৃণ হয়ে গিয়েছে তা নয়, মাঝে মধ্যেই নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। কিন্তু অনাথ শিশুগুলোর মুখের হাসি সে পথের সমস্ত বাধা কাটিয়ে দেয়।
সম্প্রতি একটা অনাথাশ্রমের শিশুদের থেকে তিনি জেনেছেন তারা কোনওদিন নুডলস খায়নি। তাদের জন্য তাই মইনুদ্দিনের পরবর্তী মেনু নুডলস।