মধ্যপ্রদেশের লরহা গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছরের জুধাইয়া বাই বৈগা। তিনি আদতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। সম্প্রতি ইতালির মিলানে তাঁর শিল্পসত্ত্বা বিশ্বের দরবারে ঠাঁই পেল।
সম্প্রতি তাঁর পেন্টিংয়ের প্রদর্শনী হল মিলানে এবং প্যারিসে। যে গ্রামের নামই শোনেননি এ দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ, সেই গ্রামকেই তিনি পরিচয় করালেন আন্তর্জাতিক মহলে।
লরহা গ্রামের বাসিন্দারা মূলত বাঁচার জন্য জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল। তাঁদের মধ্যে কেউ ছোটখাটো অন্য কাজও করে থাকেন। তবে শিক্ষা, রাস্তা, চাকরি তাঁদের কাছে আজও পৌঁছয়নি।
মাত্র ৪০ বছর বয়সে বৈগার স্বামী মারা যান। তাঁর তিন সন্তান। এক মেয়ে এবং দুই ছেলে।
স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের দেখাশোনা করে সংসার চালানো খুবই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাছে।
৭০ বছর বয়সে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন জুধাইয়া বাই বৈগা। আর দ্বিতীয় ইনিংসটা খুব রঙিন ভাবেই শুরু করলেন তিনি।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ রঙিন পোশাক পরতে এবং নিজেদের নানা অলঙ্কারে সাজাতে ভালবাসেন। সেই রংই বোধহয় আঁকার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন বৈগা।
জনপ্রিয় আর্ট শিক্ষক আশিস স্বামীর প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। আশিস স্বামী শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী। মধ্যপ্রদেশে এ রকম বেশ কিছু আদিবাসী এলাকায় তিনি বিরল শিল্পপ্রতিভা খুঁজে বেরান।
বৈগার গ্রামে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে ক্রমশ দক্ষ হয়ে ওঠেন বৈগা। তাঁর শিল্প এখন প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে।
দেশের বাজারে তাঁর আঁকা ছবি কোনওটা ৩০০ আবার কোনওটা ৮০০ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কৌতূহলীরা। সম্প্রতি বিদেশেও প্রদর্শনী হল তাঁর আঁকার।
তবে টাকায় ততটা আগ্রহ নেই বৈগার। তাঁর আগ্রহ নিজের গ্রামকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এখন খুবই জনপ্রিয় বৈগা। তিনি বলছেন, ‘‘আঁকা আমাকে অন্য জগতে নিয়ে যায়। নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গীর মতো লাগে। আঁকায় আগে কোনও আগ্রহ ছিল না আমার। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পেয়েই যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম দিনই রং-তুলিকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।’’