একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও জীবনে একবার অন্তত লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হননি, এ কথা হলফ করে বলতে পারবেন? ছোট থেকেই সমাজ আমাদের বুঝিয়ে দেয়, এই কাজটি ছেলেদের আর এই কাজটি মেয়েদের। সমাজের এই চিরাচরিত নিয়মকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভারতের প্রথম মহিলা দমকলকর্মী হলেন হর্ষিনী কানহেকর।
মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্ম হয় এই অগ্নিকন্যার। প্রথমে নাসিকের সিডিও মেরি স্কুল ও পরে অমৃতাবাই দাগা কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি।
কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন এমবিএ করতে। কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটা এই মানুষটার ইচ্ছা ছিল কিছু আলাদা করার। কলেজে থাকতে চুটিয়ে এনসিসি করা মেয়েটি কিছু দিনের মধ্যেই ছেড়ে দেন এমবিএ কোর্স।
‘কিছু একটা’ করার তাগিদেই একদিন নাগপুরের এনএফএসসি অর্থাৎ জাতীয় দমকল পরিষেবা কলেজে ভর্তি হওয়ার আবেদন পাঠিয়ে দেন তিনি।
জীবনের মোড় ঘুরে যায় তখন থেকেই। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার দিনেও হর্ষিনী জানতেন না তিনি ইতিহাস তৈরি করতে চলেছেন।
মাত্র ৩০টি আসনের মধ্যে একটিতে নিজের জায়গা পাকা করে কলেজের প্রথম দিন বেজায় মুশকিলে পড়েন তিনি। গিয়ে দেখেন তিনি বাদে আর কোনও মহিলা শিক্ষার্থীই নেই সেখানে। এও জানতে পারেন, ইতিহাস গড়ার খুব কাছে এসে পৌঁছেছেন তিনি।
যাত্রাটা খুব সহজ ছিল না। সাহায্য যেমন পেয়েছেন, নিন্দিতও হয়েছেন বেশ কয়েক বার। সেই সময় হঠাৎ মিডিয়ার লাইমলাইটে চলে আসার জন্য কলেজের বাকি সহপাঠীদের থেকে খারাপ মন্তব্যও উড়ে আসত। তবে সে সবে দমে যাওয়ার মেয়ে তো তিনি নন।
২০০৬ সালে তিনি গুজরাতের মেহাসানা দমকল কেন্দ্রে যোগদান করেন। এর আগে দিল্লি, কলকাতায় বন্যার সময় মানুষকে উদ্ধার থেকে শুরু করে কোথাও আগুন লাগা— তৎপরতার সঙ্গেই উদ্ধারকার্য চালিয়ে গিয়েছেন এই আগুন-মেয়ে।
বাইক চালাতেও ভালবাসেন তিনি। বাইক নিয়ে ঘুরে এসেছেন লে- লাদাখের খারদুংলা পাস ও।
ভারতের প্রথম মহিলা পাইলট শিবানি কুলকর্নিকেই নিজের আদর্শ মনে করেন হর্ষিনী।