মধ্যবিত্ত পরিবারের আইআইটি পাশ ছেলে চাকরি করেই সারা জীবন কাটিয়ে দেবেন ভেবেছিলেন। সহকর্মীদের ‘খিদে’ দেখে স্থির করে ফেললেন ‘দুয়ারে খাবার’ পৌঁছে দেওয়ার।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। চাকরি ছেড়ে বানিয়ে ফেললেন অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ জোম্যাটো।
২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার! যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
তিনি দীপেন্দ্র গয়াল। জোম্যাটোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, অধিকর্তা এবং সিইও। দীপেন্দ্রর জন্ম পঞ্জাবের মুক্তসরে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে দীপেন্দ্রর মা-বাবা দু’জনেই শিক্ষক ছিলেন।
দীপেন্দ্র নিজেও ছিলেন মেধাবী। ২০০৫ সালে তিনি দিল্লি আইআইটি থেকে স্নাতক হন। তার পর বেন অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি সংস্থায় ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজে যোগ দেন। নয়াদিল্লিতে ছিল তাঁর অফিস।
অফিসে কাজ করার সময় দীপেন্দ্র চটজলদি ভাল খাবারের গুরুত্ব বুঝেছিলেন। আরও একটি বিষয় তাঁর নজরে এসেছিল। সেটি হল সহকর্মীদের কাছে রেস্তরাঁর মেনু কার্ডের চাহিদা।
ওই অফিসেই তাঁর পরিচয় হয়েছিল পঙ্কজ চাড্ডার সঙ্গে। ভোজনবিলাসীদের কথা মাথায় রেখে ২০০৮ সালে স্টার্টআপটি শুরু করেছিলেন পঙ্কজ এবং দীপেন্দ্র। তখন এর নাম ছিল ‘ফুডিবে’। ২০১১ সালে নাম পাল্টে হয় ‘জোম্যাটো’।
দু’জনে মিলে প্রথমে সহকর্মীদের কাছেই খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করলেন। নিজেদের অ্যাপ বানিয়ে তাতে আশেপাশের সমস্ত রেস্তরাঁর মেনু কার্ড আপলোড করলেন। আর সেই অ্যাপে নিজেদের ফোন নম্বরও দিলেন।
অভিনব এই পরিকল্পনা দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন সহকর্মীরা। সহকর্মীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ফুডিবে।
এই ব্যবসায় ভবিষ্যৎ দেখেছিলেন দীপেন্দ্র। কিন্তু চাকরির পাশাপাশি পুরো সময় তিনি দিতে পারছিলেন না। তাঁর স্ত্রী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পরই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।
তার পর থেকে পুরোপুরি এই ব্যবসাতেই ডুব দেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে দীপেন্দ্র তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা মা-বাবাকে জানাতে পারেননি। মা-বাবা জানতে পেরেছিলেন অনেক পরে।
পরবর্তী কালে তাতে বিনিয়োগ করে ইনফো এজ এবং চিনের অ্যান্ট গ্রুপ। বর্তমানে বিশ্বের ২৪টি দেশে খাবার সরবরাহে যুক্ত জোম্যাটো।
২০০৮ সালে স্টার্টআপ নিয়ে নামলেও গত বুধবারই প্রথম শেয়ার বাজারে পা রাখে জোম্যাটো। শেয়ার প্রতি দাম রাখা হয় ৭৬ টাকা।
শুক্রবার সকালে বাজার খুলতে নথিভুক্তিকরণ শুরু হলে, বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)-এ তাদের প্রত্যেক শেয়ারের দাম বেড়ে এক সময় ১৩০ টাকায় পৌঁছয়।
শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজারে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ইউনিকর্ন’ তকমা পেয়ে গিয়েছে জোম্যাটো। যে সমস্ত সংস্থার বাজারমূল্য ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি (১০০ কোটি ডলার) হয়, শেয়ার বাজারের ভাষায় তাদের ‘ইউনিকর্ন’ বলা হয়।