মায়াবতী। ফাইল চিত্র।
দু’বছর পর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভার নির্বাচন। চলতি বছরের লোকসভা ভোটের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নিজেদের মতো করে নড়েচড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে এসপি এবং বিএসপি শিবিরকে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও সেই লক্ষণ ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে।
লোকসভায় পরাজয়ের পর এসপি-বিএসপি ‘মহাজোট’ শুধু ভেঙেই যায়নি, প্রবল তিক্ততা ও পারস্পরিক দোষারোপের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। তার পরে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীকে সংসদে কোনও বিষয়েই বিজেপি সরকারের বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি। এই প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভা দুই কক্ষেই মোদী সরকারের সমালোচনা করলেন বিএসপি সাংসদেরা। শুধু তাই-ই নয়, দুই কক্ষেই সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। একই ভাবে এসপি-ও অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে উগ্র বিরোধিতা করেছেন এই বিলের।
উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রবল চাপ রয়েছে মায়াবতীর পরিবারের উপর। তাঁর বিজেপি-বিরোধিতার স্বর নরম করার সেটাও একটা প্রধান কারণ। কিন্তু সেই চাপ কাটিয়ে মায়াবতীরও নিজস্ব দলিত পরিচয় টিঁকিয়ে রাখার পাশাপাশি মুসলমান সম্প্রদায়কেও নিজের ছাতার তলায় আনার দায় রয়েছে। বিএসপি-র এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে দলের নেতৃত্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে। এক দিকে নিজের দলিত ভোটব্যাঙ্ক অক্ষুণ্ণ রাখা এবং তার সঙ্গে যত বেশি সম্ভব মুসলিম ভোট যোগ করতে দলের নানা শীর্ষ পদেও মুসলমান নেতাদের বসিয়েছেন মায়া। এই মুহূর্তে বিএসপি-র লোকসভার নেতা দানেশ আলি এবং এবং দলের রাজ্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে মানকুয়াদ আলিকে নিযুক্ত করেছেন বিএসপি নেত্রী। কিন্তু তিন তালাক এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ প্রত্যাহার নিয়ে বিএসপি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্বর সেভাবে না তোলায়, দলের মুসলিম অংশের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। সেই ক্ষত মেরামতের জন্য গত পরশু লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বলানো হয়েছে দলের মুসলমান সাংসদ আফজল আনসারিকে দিয়ে। আনসারি বলেছেন, ‘‘এক জন মুসলমান বলে তাঁকে দেশের নাগরিক হিসাবে না-মেনে নেওয়ার অর্থ, দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা। আমরা এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছি।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ রাজ্যসভায় বিএসপি-র এক ব্রাহ্মণ সাংসদ এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সতীশ মিশ্রও এই বিলের বিপক্ষে সওয়াল করে বলেন, ‘‘কেন মুসলমান শরণার্থীদের এই নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হল? সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, আইনের চোখে সব ধর্মাবলম্বীর সমান অধিকার। কিন্তু বাবাসাহেব অম্বেডকর যা তৈরি করে গিয়েছিলেন বর্তমান সরকার তা ধ্বংস করছে।’’