দারিদ্র, অপুষ্টি এবং বৈবাহিক ধর্ষণ। তার পর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ৩ বার আত্মহত্যার চেষ্টা। জীবনের ২০টি বছর এ ভাবেই কাটিয়েছেন একতা কপূর। কোনও ফিল্মের নায়িকার থেকে কম যান না বাস্তবের এই একতা। কিন্তু সমস্ত দুর্গম পরিস্থিতিকে জয় করে বাস্তবের একতা আজ এক প্রতিষ্ঠিত ফিটনেস প্রশিক্ষক। আন্তর্জাতিক মহলেও তিনি পরিচিত ফিটনেস প্রশিক্ষক এবং জাতীয় স্তরে এক জন সোনাজয়ী ভারোত্তোলক।
দেহরাদূনে জন্ম একতার। নৈনিতালের বিড়লা মন্দির স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। খুব ছোটবেলাতেই একতাকে চেড়ে চলে যান তাঁর মা। তার পর থেকে বাবার কাছেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর। পিসিই ছিলেন তাঁর মায়ের মতো।
বাবার একার পক্ষে ঘর এবং বাইরের সমস্ত কাজ করে ওঠা সম্ভব ছিল না। মেয়ের খাওয়াদাওয়ার উপরও যথেষ্ট নজর দিতে পারতেন না। যার ফলে ছোটবেলায় অপুষ্টিতে ভুগতেন একতা। স্কুলে পড়াশোনাও ঠিকমতো করতে পারতেন না।
তবে মা-বাবাকে কাছে না পাওয়াটা খুব ছোট বয়সেই একতাকে স্বনির্ভর হতে শিখিয়েছিল। স্কুলের বাইরে দিনের বেশির ভাগ সময় খেলাধুলো করে কেটে যেত তাঁর। একতা ১৮ বছরের হতেই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন বাবা। এর পর থেকেই জীবন বদলে যেতে শুরু করে তাঁর।
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর থেকেই একতা বুঝতে পারেন বিয়ের আগে অনেক সত্য গোপন করেছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কয়েক দিন যাওযার পরই একতা বুঝে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোরাজুরি চালাতেন তাঁর স্বামী। স্বামীর থেকে বয়সে অনেকটা ছোট ছিলেন একতা। তাঁর উপর রীতিমতো যৌন নির্যাতন চালাতেন স্বামী। বার বার ধর্ষণের শিকার হতেন একতা।
সহ্য করতে না পেরে এক দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে নৈনিতালে নিজের বাড়িতে পালিয়ে আসেন একতা। কিন্তু পারিপার্শ্বিক চাপে বিয়ের পর নিজের বাড়িতে বেশি দিন থাকাও সম্ভব হচ্ছিল না তাঁর পক্ষে। আবার পড়াশোনাও সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। ফলে উপার্জন করে স্বনির্ভর হতেও পারছিলেন না।
সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে অত্যন্ত বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ৩ বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন এই সময়ে। শেষ বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তিও করাতে হয়। আর সেখানে গিয়ে একতা জানতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা।
একতার একটি মেয়ে হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে সন্তানকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারবেন কি না সেটা বুঝতে পারছিলেন না তিনি। মেয়েকে বড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তা ঘিরে থাকত তাঁকে। একসময় একতা ভেবেছিলেন কোনও অবস্থাপন্ন পরিবারের নিঃসন্তান দম্পতির হাতে মেয়েকে তুলে দেবেন। যদিও সেটা করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।
কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন একতা। প্রথমে নৈনিতালের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক হন। তার পর ৩ বছরের মেয়েকে বাড়িতে বাবার কাছে রেখে উপার্জনের জন্য দিল্লি চলে যান।
দিল্লিতে নানা ধরনের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। কখনও কোনও ফ্যাশন ডিজাইনারকে সাহায্য করতেন, কখনও ফিল্মের সেটেও সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। কখনও আবার শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু কোনও কাজই তাঁকে খুশি দিতে পারেনি।
একতার দূর সম্পর্কের এক ভাই কানাডায় থাকতেন। মেয়েকে নিয়ে একতা কানাডা চলে যান। সেখানে এক বন্ধু তাঁকে যোগ প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা বলেন। মুম্বই ফিরে যোগ প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন একতা। যোগ ছাড়াও আরও অনেক ধরনের ফিটনেস প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
এখানেই তাঁর সঙ্গে শশাঙ্কের পরিচয় হয়। শশাঙ্ক স্কুলে তাঁর সিনিয়র ছিলেন। তাঁকে গাইড করতে শুরু করেন শশাঙ্ক। ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রিতে কত রকমের প্রতিযোগিতা হয় সে সব শশাঙ্কের থেকেই শিখেছিলেন একতা। পরে শশাঙ্ককে তিনি বিয়েও করেন।
একতা এখন এক জন প্রতিষ্ঠিত ফিটনেস প্রশিক্ষক। ভারোত্তোলনেও তিনি সোনার পদকপ্রাপ্ত জাতীয় বিজয়ী। স্বামী শশাঙ্কের সঙ্গে দেহরাদুনে একটি ফিটনেস স্টুডিয়োও চালান একতা।