বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না সিকিমে বেড়াতে যাওয়া ওই পর্যটকদের। —ফাইল চিত্র।
বেড়ানোর রোমাঞ্চ বদলে গিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে! বিভিন্ন হোটেলে বন্দি হয়ে থাকা পর্যটকদের এখন এটাই সঙ্গী। সিকিমে বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করে আপাতত কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, সেই দুশ্চিন্তাতেই দিন কাটছে কলকাতা ও হাওড়ার একাধিক পরিবারের। বিকল্প রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হলেও নতুন করে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না সিকিমে বেড়াতে যাওয়া ওই পর্যটকদের।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভয়াল আকার নিয়েছে সিকিমের পরিস্থিতি। তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ি পথের একাধিক জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমানায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ভেঙে গিয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম। আপাতত কোনও পর্যটককেই সে দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সিকিম প্রশাসন সূত্রের খবর। একাধিক পরিবার সেখানে আটকে রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই উত্তর নেই কারও কাছেই।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিমে গিয়ে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি পর্যটক সেখানে আটকে পড়েছেন। কলকাতার একাধিক পরিবার পুজোর আগে সিকিমে ঘুরতে গিয়েছিল। কেউ কেউ ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়িতে নেমে আসতে পারলেও অনেকেই এখনও আটকে রয়েছেন সেখানে। গত ২ অক্টোবর সিকিমে ঘুরতে গিয়েছিলেন কসবার বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক ভবানীপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গ্যাংটক ঘুরে পেলিং যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত সবটাই বাতিল। বুধবার থেকে গ্যাংটকের হোটেলেই রয়েছেন তাঁরা। শনিবার ফেরার ট্রেন থাকায় শুক্রবার ঘুরপথে কোনও মতে শিলিগুড়িতে নামার কথা ভেবেছেন বলে জানালেন। বৃহস্পতিবার ফোনে ভবানীপ্রসাদ বললেন, “নানা রকম খবর শুনছি। আর আতঙ্কে ভুগছি। পরিবারের বাকিরাও আতঙ্কিত। আত্মীয়স্বজনও উদ্বিগ্ন হয়ে বার বার ফোন করছেন। আমরা আপাতত সমস্ত পরিকল্পনা বাতিল করে কলকাতায় ফেরার বন্দোবস্ত করছি।” একই ভাবে সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করে হোটেলেই আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়ার কৌশিক হাজরার। বন্ধুবান্ধব মিলে মোট আট জনের একটি দল গত রবিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পূর্ব সিকিমের ভুলুক, সিল্ক রুটের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। আপাতত সে সব বাতিল। দাঁড়াগাওয়ের একটি হোটেল থেকে ফোনে বললেন, “গাড়ি নিয়ে বেরোলেও পথে সেনাকর্মীরা আটকে দেন। চারদিকে শুধু পুলিশ আর ধস। সেখান থেকে কোনও মতে ফিরে এসে হোটেলে উঠেছি। যত ক্ষণ না বাড়ি ফিরছি, আতঙ্ক কাটছে না। জানি না, সুস্থ ভাবে কী করে শিলিগুড়ি ফিরব।"
দিন কয়েকের জন্য ১৩৮ জন স্কুলপড়ুয়াকে নিয়ে সিকিমে গিয়েছিল ব্যারাকপুরের একটি দল। বিপর্যয় কাটিয়ে কোনও মতে তারা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় এ দিন বললেন, “বুধবার সকালে সিকিম থেকে বেরিয়ে দার্জিলিং ঘুরে শিলিগুড়িতে ফিরে আসতে পেরেছি। যদিও রাতে জলপাইগুড়িতে এসে পৌঁছনোয় ট্রেন ধরতে পারিনি। এতগুলো বাচ্চাকে নিয়ে রাতেই ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করে প্রথমে মালদহ ও সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে আসছি।”
সিকিম ভ্রমণে যাওয়া পরিজনের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তা বাড়ছে ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর সেনগুপ্তের। তিনি জানান, গত শনিবার হালতু থেকে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে উত্তর সিকিমে বেড়াতে গিয়েছিলেন শ্যালিকা দেবযানী নাগ। মঙ্গলবার রাতে শেষ বার ফোনে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তার পর থেকে আর কাউকে ফোনে পাচ্ছেন না।
শুভঙ্করের কথায়, “শেষ বার যখন কথা হল, তখন ওরা বলেছিল, পরের দিন জিরো পয়েন্টে যাবে। কিন্তু তার পর থেকে ফোনে আর কাউকে পাচ্ছি না। কেমন আছে, কিছুই জানি না। সকাল থেকে বিভিন্ন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেও কোনও সদুত্তর নেই। ওখান থেকে শুধু বলছে, পর্যটকদের মধ্যে কোনও হতাহতের খবর নেই। আপাতত এই কথাটুকুই আমাদের ভরসা।"