ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে ভারতীয় বধূ অঞ্জু। তিনি সেখানে গিয়ে ‘বন্ধু’ নাসেরুল্লাহকে বিয়ে করেছেন বলেও পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। যুগলের বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই সব ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেই সব ছবি এবং তথ্য ইতিমধ্যেই সকলের নজর কেড়েছে। এর পিছনে কোনও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে না কি এর নেপথ্যে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে— সেই প্রশ্নও ভাবাতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যেই অঞ্জু এবং নাসেরুল্লাহের কাহিনির বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যার জেরে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মনে।
- ২০১৯ সালে সমাজমাধ্যম ফেসবুকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বাসিন্দা নাসেরের সঙ্গে পরিচয় হয় ভারতীয় বধূ অঞ্জুর। সেখান থেকে বন্ধুত্ব । খবরে উঠে এসেছে, গত এক বছর ধরে পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা পেতে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন অঞ্জু। এত দিন না পেলেও ‘পাক বধূ’ সীমা হায়দারের ভারতে প্রবেশের খবর প্রকাশ্যে আসার পর গত ২১ জুলাই পাকিস্তান যাওয়ার ভিসা হাতে পান অঞ্জু। মনে করা হচ্ছে, এর পরই স্বামীকে মিথ্যা কথা বলে পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেন অঞ্জু। পৌঁছে যান প্রতিবেশী দেশে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সন্দেহ, অনেক দিন ধরেই আইএসআই গুপ্তচররা পাকিস্তান দূতাবাসে মোতায়েন রয়েছেন। আর তাই সীমার অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের ঘটনা লঘু করে দেখাতে অঞ্জুরও পাকিস্তান যাওয়ার জন্য ভিসা মঞ্জুর করা হয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
- পাকিস্তানে অঞ্জুর উপস্থিতির খবর ইচ্ছাকৃত ভাবে পাক সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। অঞ্জু পাকিস্তানে যাচ্ছেন, এ কথা তাঁর স্বামী অরবিন্দও জানতেন না। নাসেরের পরিবারের তরফ থেকেও এই তথ্য কাউকে জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে অঞ্জু যে পাকিস্তানে পৌঁছেছেন, সেই তথ্য সে দেশের সংবাদমাধ্যমকে কে দিল?
- অঞ্জু যে পাকিস্তানে রয়েছেন, তার প্রমাণস্বরূপ পাক সংবাদমাধ্যমগুলিতে বেশ কিছু ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। এই ভিডিয়োগুলি সংবাদমাধ্যমের হাতে কোথা থেকে এল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
- সীমার অবৈধ ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ভারতে আসার পর তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। পূজা-আচ্চা করছেন। সিঁদুরও পরছেন। অন্য দিকে, পাক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম পরিবর্তন করেছেন অঞ্জুও। ধর্মান্তরণের পর তাঁর নাম ফতেমা। অঞ্জু এবং নাসের স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তাঁরা দুজনে শুধুই বন্ধু। প্রেম করেন না। তা হলে কেন অঞ্জুকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হল? উঠছে প্রশ্ন।
- পাকিস্তান সফরের কথা প্রকাশ্যে আসার পর অঞ্জু জানিয়েছিলেন, তিনি পাকিস্তানে ঘুরতে এসেছেন এবং তাঁর সে দেশে থেকে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই। তিনি শীঘ্রই ভারতে ফিরে আসবেন বলেও জানিয়েছিলেন। এ-ও জানিয়েছিলেন, তিনি নাসেরকে বিয়ে করবেন না। কিন্তু এর পরেই নাসেরের সঙ্গে অঞ্জুর বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে। অঞ্জু কেন নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন, তা-ও ভাবাচ্ছে অনেককে। অঞ্জু এবং নাসেরের বিয়ে করার বিষয়টি ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের মলকন্দ বিভাগের ডিআইজি নাসির মেহমুদ সাট্টি। অঞ্জু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফতেমা নাম নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মেহমুদ।
তা হলে কি অঞ্জুর গতিবিধি নজরে রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের? আইএসআই-ই কি কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অঞ্জুর গোপন তথ্য পাক সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করছে? উঠছে এমন একাধিক প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, এক দিকে পাকিস্তান থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে হইচই ফেলে দিয়েছেন পাক ‘বধূ’ সীমা হায়দার। অন্য দিকে, প্রশ্ন উঠছে ভারত থেকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়াতে যাওয়া অঞ্জুকে নিয়েও। ‘প্রেমের টানে’ ঘর সংসার ছেড়ে সীমান্ত পার করেছেন দু’জনেই।
সীমার ভারতে অনুপ্রবেশ নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। জট ছাড়াতে তদন্তে নেমেছে উত্তরপ্রদেশ এটিএস এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। সীমা আসলে কে? ভারতীয় প্রেমিকের টানে সীমান্ত পার করে আসা সাধারণ বধূ, না পাক গুপ্তচর, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সীমা পাকিস্তানের কোনও চর কি না, তার তদন্তই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটিএসের কাছে। তার মধ্যেই ভাবাতে শুরু করেছে পাকিস্তানে যাওয়া ভারতীয় বধূ অঞ্জুর ঘটনায় ওঠা নানা প্রশ্নও।