গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও এবং তাদের ম্যালওয়্যার পেগাসাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে দেশে দেশে। হোয়াটসঅ্যাপ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ২০১৯-এ। এডওয়ার্ড স্নোডেন সংস্থাটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে দেশে-দেশে রহস্যজনক মৃত্যু ও ধরপাকড়ের বিচার চাইছেন। হোয়াটসঅ্যাপ সিইও উইল ক্যাথকার্ট জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৪০০টি স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ম্যালওয়্যার ঢোকানোর জন্য ২০১৯ সালেই তারা ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। সংশ্লিষ্ট সব দেশের সরকারকে এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্যাথকার্টের কথায়, “পেগাসাস ব্যবহার করে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এনএসও। এটা থামাতেই হবে।” টুইটারে তিনি লিখেছেন, “ইন্টারনেটের সুরক্ষার প্রশ্নে এটা জেগে ওঠার সময়। বিশ্বের কয়েকশো কোটি মানুষের কাছে স্মার্টফোনই মূল কম্পিউটার। আমাদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। এনএসও-কে তাদের কাজের জন্য দায়ী করতে আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানি ও বিশেষ করে সরকারগুলির উঠেপড়ে লাগাটা একান্ত জরুরি।”
প্রায় ৫০ হাজার স্মার্টফোনে ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র আড়ি পাতার ম্যালওয়্যার পেগাসাস ঢোকানোর অভিযোগ নিয়ে সোমবার প্রাগে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার বলেন, “এটা যদি সত্যি হয়, তবে তা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না।”
সমস্যা হল, ২০১০ সালে তৈরি এই এনএসও বিভিন্ন দেশের সরকার বা সংস্থাগুলিকে এমন প্রযুক্তি জোগায় বলে দাবি করে। ক্ষমতাসীন যে সব সরকার তাদের ‘পরিষেবা’ নিয়েছে, তারা এতে আদৌ সাড়া দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি এজেন্সির তথ্য ফাঁস করার জন্য খ্যাতি যাঁর, সেই এডওয়ার্ড স্নোডেনের দাবি, “এনএসও-র অবৈধ ম্যালওয়ারের জোরে যাঁদের ধরপাকড় করা হচ্ছে, এমনকি মৃত্যুও ঘটছে, সে সবের জন্য সরাসরি ও ফৌজদারি ভাবে দায়ী করা উচিত সংস্থাটিকে।”
২০১৭ সালে দক্ষিণ মেক্সিকোর সিডাডা আলতামিরানো শহরের সিসিলিয়ো পিনেডা বির্টো (৩৮) বারবার খুনের হুমকি পাচ্ছিলেন। পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে সরব হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান তিনি। এখন জানা যাচ্ছে, এনএসও-র পেগাসাস বাসা বেঁধেছিল তাঁর ফোনে। বাদ নেই বিজ্ঞানীরাও। কোভিড-১৯-এর নানা দিক নিয়ে সরব ভারতের অন্যতম ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ গগনদীপ কাঙ্গের ফোনও পেগাসাস আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, রোহিণী সিংহ, বিজয়েতা সিংহ রিতিকা চোপড়া বা স্বাতী চতুর্বেদীর মতো সাংবাদিকরাও রয়েছেন পেগাসাসের নজরদারিতে।
অলাভজনক সংগঠন ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন-এর মতে, গণতন্ত্র ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার বিপন্ন করে এমন আগ্রাসী নজরদারির ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এই বিষয়ে আইন প্রণয়নেরও ডাক দিয়েছ আইএফএফ। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, নজরদারি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকর্ম রোখার জন্যই তাঁরা ‘ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস (পাওয়ার অ্যান্ড রেগুলেশন) বিল এনেছিলেন ২০১১ সালে। সেই বিলটি আবার সংসদে পেশ করার জন্য তালিকায় তোলা হয়েছে।