Manipur Violence

কেউ চান সন্তানের দেহ, কেউ ডাকনামের অপেক্ষায় 

বিশ বছরের ফিজাম হেমনজিৎ আর তাঁর বান্ধবী হিজাম লিংথোইংগাম্বি হারিয়ে গিয়েছিলেন গত বছরের ৬ জুন। সেপ্টেম্বরে তাঁদের মৃতদেহ হিসেবে দাবি করে একটি ছবি ভাইরাল হয়।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৬:২৬
Share:

উত্তপ্ত মণিপুর। —ফাইল চিত্র।

অ্যাটম সমরেন্দ্রর দেহ মেলেনি আজও। সকলে ধরেই নিয়েছেন গত বছরের ৬ মে থেকে নিখোঁজ সমরেন্দ্র মারা গিয়েছেন সংঘর্ষে। ‘প্যাংগং’ গাছের পাতাকে প্রতীক হিসেবে রেখে তাঁর শেষকৃত্য সেরে ফেলতে হয়েছে স্ত্রী কবিতাকে। কিন্তু কবিতা এখনও ভাবেন, হয়তো সমরেন্দ্র কোথাও লুকিয়ে আছেন। কখনও দরজা খুললেই শুনবেন আদরের ডাকনাম।

Advertisement

বিশ বছরের ফিজাম হেমনজিৎ আর তাঁর বান্ধবী হিজাম লিংথোইংগাম্বি হারিয়ে গিয়েছিলেন গত বছরের ৬ জুন। সেপ্টেম্বরে তাঁদের মৃতদেহ হিসেবে দাবি করে একটি ছবি ভাইরাল হয়। কিন্তু ফিজামের বাবা জানিয়েছেন, স্বচক্ষে মৃতদেহ না দেখা পর্যন্ত আশা ছাড়বেন না।

পুত্রহারা এন প্রেমলতা মোবাইল আঁকড়ে থাকেন সারাক্ষণ। মনে আশা, যদি ১৯ বছরের ছেলেটার বেঁচে থাকার খবর আসে রিংটোনে।

Advertisement

মণিপুরের সংঘর্ষের এক বছর হল আজ। নিহতের সংখ্যা অন্তত ২১৯। ৩১ জন মেইতেই ও ১৪ জন কুকি এখনও নিখোঁজ। প্রিয়জনের দেহাবশেষটুকু ছাড়া সরকারের কাছে আর কিছু চাইছেন না স্বজনহারারা।

মূল সমস্যার সমাধান আজও দূর অস্ত্‌। মৃত্যু-তালিকা ক্রমবর্ধমান। ঘরছাড়া প্রায় ৭০ হাজার। তার মধ্যে বিশ হাজারের বেশি বাচ্চা। আজ রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকে এক বৈঠকে দুর্গতদের পুনর্বাসন, নিখোঁজদের বিষয়ে তথ্য জোগাড়, দুই সম্প্রদায়ের এলাকার সীমানায় পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েনের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ এবং মুখ্যসচিব বিনীত জোশীর সঙ্গে।

কুকি ও মেইতেইরা নানা অনুষ্ঠান করেছে মণিপুরে এবং দিল্লিতে। ইম্ফলের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে শরণার্থীরা ও মেইতেই সংগঠনগুলি আজ ‘জাগরণের দিন’ উদ্‌যাপন করেছে। সমতলের নানা এলাকায় নিহতদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। মেইতেই যৌথ মঞ্চ অবশ্য ‘চিন-কুকি মাদক সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণের বর্ষপূর্তি’ নাম দিয়ে দিনটি পালন করেছে। শান্তি ও অখণ্ডতার দাবিতে নিজেদের মাথা নেড়া করে সেকমাই থেকে ইম্ফলের কাংলা দুর্গ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গিয়েছেন সাত জন মেইতেই মা। কুকি এলাকায় আজ সব বাড়িতে উড়েছে কালো পতাকা। বন্‌ধ ছিল সর্বাত্মক। সব গির্জায় গণপ্রার্থনা হয়। গণকবরে শ্রদ্ধা জানায় জনতা। চূড়াচাঁদপুরে প্রতীকী একশো কফিন রাখা ও নিহত সব কুকির ছবি লাগানো ‘ওয়াল অব রিমেমব্রেন্স’-এ বড় জমায়েত হয়। রাতে মোমবাতির আলোয় হয়েছে স্মরণসভা।

রাজ্যের দুই প্রধান সড়ক কার্যত কুকি ও মেইতেই এলাকায় দ্বিখণ্ডিত। যাতায়াতে মুসলিম পাঙ্গালরাই সেতু। বহু ব্যবসায়ী ও বেসরকারি চাকুরে রাতারাতি বেকার হয়েছেন। পশ্চিম ইম্ফলের ত্রাণ শিবিরে থাকা ওইনাম নিংথেমের চূড়াচাঁদপুরে বড় ব্যবসা ও বাড়ি ছিল। ওইনাম এখন দিনমজুর। শরণার্থীদের হাতের কাজ শিখিয়ে রোজগারের ব্যবস্থা করা হলেও তাতে পেট ভরে না। ভাল চিকিৎসাও মেলে না ত্রাণ শিবিরে।

অমিত শাহ ভোটের প্রচারে এসে কুকিদের পৃথক প্রশাসনের দাবি উড়িয়ে ঘোষণা করেছেন, মণিপুরকে অখণ্ড রেখে শান্তি ফেরানোই কেন্দ্রের অগ্রাধিকার। কিন্তু আইটিএলএফের সাধারণ সম্পাদক মুয়ান তোম্বিং বলছেন, কেন্দ্রশাসিত কুকি এলাকা ছাড়া আর কোনও সমাধানসূত্র নেই। যে বিভাজন মণিপুরে ঘটে গিয়েছে, তা আর কখনও স্বাভাবিক হবে না।

মোরেতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মেইতেই কোইজাম গোবিন্দ। ইম্ফলের ত্রাণ শিবিরে সপরিবার আশ্রয় নেওয়া গোবিন্দ এখন রাস্তায় আনাজ বেচেন। কিন্তু স্বপ্ন দেখেন, ঝড় থেমে গেলে তিনি আবার কুকি এলাকার স্কুলে পরের প্রজন্মকে শেখাবেন মানবতার পাঠ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement