মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। — ফাইল চিত্র।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের নিরাপত্তারক্ষীদের কনভয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটল। জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে জাতীয় সড়ক ৩৭-এর উপর পুলিশ কনভয়ে অতর্কিত হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এই হামলার ঘটনায় এক জন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ইম্ফল থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে টি লাইজং গ্রামের কাছে জাতীয় সড়কের উপর আচমকাই হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। কনভয় লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। গুলির আঘাতে আহত হন মোইরাংথেম আজেশ নামে এক পুলিশকর্মী। বিষ্ণুপুর জেলার থাঙ্গা নাগারম লেইকাইয়ের বাসিন্দা তিনি। তাঁর ডান কাঁধে গুলি লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। তড়িঘড়ি তাঁকে ইম্ফলের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে আজেশের।
উল্লেখ্য, ভোটপর্ব মিটতেই গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে। মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু এবং ঘর ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে মণিপুরের জিরিবাম জেলায়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, কুকি জঙ্গিদের হামলার মুখে ইতিমধ্যেই ২০০ জনের বেশি মেইতেই গ্রামবাসী এলাকা ছেড়েছেন। তাঁদের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় জিকি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ত্রাণশিবিরে।
জিরিবাম জেলার লামতাই খুনউ, দিবং খুনউ, নুনখাল এবং বেগরা গ্রামে সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা মেইতেইদের বহু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। কুকিদের উপর পাল্টা হামলা এবং বাড়িঘর পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে মেইতেই সংগঠন আরাম্বাই টেঙ্গলের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
গত এক বছরের গোষ্ঠীহিংসা পর্বে জিরিবামে কোনও বড় হিংসা না ঘটলেও লোকসভা ভোটের পর বদলে গিয়েছে ছবি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জিরিবাম গুলালতল এলাকার কৃষক এস শরৎ কুমার সিংহের গলাকাটা দেহ ফাইজল পুঞ্জির জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকায় কুকি সম্প্রদায়ের বসতি থাকায় খুনের ঘটনায় জনজাতিদের অভিযুক্ত করে উত্তেজিত জনতা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। মঙ্গলাবারই অশান্ত ওই এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের। তার আগে নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে জিরিবাম জেলায় যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা। সোমবার সকালে সেই কনভয়েই হামলার ঘটনা ঘটল।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবনে রবিবার সন্ধ্যায় মোদী-সহ ৭২ জন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। দিল্লিতে যখন শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান চলছে, সে সময়ই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। রবিবার সন্ধ্যায় রিয়াসি জেলায় একটি মন্দির থেকে ফেরার পথে পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা। বাসটি যখন শিব খোরি মন্দির থেকে বৈষ্ণো দেবী মন্দিরের বেস ক্যাম্পের দিকে ফিরছিল, তখন ঘটনাটি ঘটে। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা পুণ্যার্থীদের বাস লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। বাসচালক গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন ৩৩ জন। পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালানোর ঘটনায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার দু’ থেকে তিন জন জঙ্গি জড়িত বলে অনুমান করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পর এ বার মণিপুরেও জঙ্গি হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে এল। মোদীর দ্বিতীয় জমানায় অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল মণিপুর। মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে বারে বারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি।