মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরে অনুপ্রবেশ রুখতে মায়ানমার সীমান্ত টপকে এ পারে আসা এবং ও পারে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধের আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘লুক ইস্ট’ বা ‘পুবে তাকাও’ নীতির অঙ্গ হিসাবে ২০১৮ সালে একটি পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আসে ভারত এবং পড়শি মায়ানমার। বলা হয়, দু’দেশের জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ সীমান্তের দু’ধারে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বন্দোবস্ত বন্ধের আর্জি জানিয়েছে বিজেপি শাসিত মণিপুর সরকার।
প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে গোষ্ঠীহিংসায় উত্তপ্ত রয়েছে মণিপুর। এখনও সেখানে শান্তিপ্রতিষ্ঠা করা যায়নি। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে হিংসার নেপথ্যে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢোকা অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে, এমনটা আগেও জানিয়েছে মণিপুর সরকার। এই অনুপ্রবেশকারীদের মদতেই রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল এবং কুকি জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলিকে মাদক চাষের রমরমা, এমন মতও রয়েছে মণিপুরে। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই গোষ্ঠীর অভিযোগ, গোষ্ঠীসম্পর্ক থাকার কারণে কুকি জঙ্গিদের একাংশ মায়ানমারে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের সীমান্ত বন্ধের এই আর্জিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সে রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কাঁটাতার দিয়ে মায়ানমার সীমান্তকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। মণিপুর ছাড়াও নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং অরুণাচল প্রদেশের মোট ১,৬৪৩ কিলোমিটার এলাকায় মায়নমারের সঙ্গে স্থলসীমানা রয়েছে ভারতের।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’শো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।