রাজবন্দি: নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে গ্রেফতার রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে। ছবি: পিটিআই।
এই গাড়িতে। পরক্ষণেই দলের নেতার বাইকে! কিছু পরেই আবার রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে হাঁটা শুরু!
তিনি কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান সরকারের পুলিশের গুলিতে মন্দসৌরে নিহত কৃষকদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে রওনা দিয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারও ঠিক করে রেখেছিল, রাহুলকে মন্দসৌরে যেতে দেওয়া হবে না। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে রাহুল রীতিমতো ঝড় তুলে দিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করলেও পরিস্থিতির চাপে মাথা নোয়াতে হল পুলিশকে। এবং শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান সীমানায় এক সরকারি অতিথিশালায় নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের অনুমতি দিতে বাধ্য হল শিবরাজের পুলিশ-প্রশাসন।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের সাহরনপুরে দলিত-ঠাকুর সংঘর্ষের পরে সেখানে যেতে গিয়ে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন রাহুল। আজ মধ্যপ্রদেশের ঘটনার পরে রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘আরএসএস নই বলে আমি উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে ঢুকতে পারব না?’’ মন্দসৌরে কৃষকদের উপর গুলি চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকে সরাসরি দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘মোদী দেশের ধনীদের দেড় লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দেন। কিন্তু কৃষকদের দুর্দশা দেখেও তাঁদের ঋণ মকুব করেন না, ফসলের দাম দেন না। উনি শুধু কৃষকদের বুলেট দিতে পারেন!’’
রাহুলের এ দিনের সফর ছিল পূর্বঘোষিত। তাই শিবরাজ সিংহ চৌহানের পুলিশ যে বাধা দেবে, তা জানাই ছিল। সেটা বুঝে এ দিন উদয়পুর পর্যন্ত বিমানে গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে মন্দসৌর রওনা দেন রাহুল। সঙ্গে ছিলেন রাজস্থানের নেতা শচীন পায়লট। মধ্যপ্রদেশ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর গাড়ি আটকায় পুলিশ। পুলিশের চোখকে ধুলো দিয়ে রানিখেড়া চকের কাছে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে দলের বিধায়ক জিতু পাটোয়ারির বাইকে চড়ে বসেন। কিছু দূর গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেডে বাধা পেয়ে নতুন রাস্তা ধরেন। সেখানেও পুলিশ আটকালে বাইক ছেড়ে মাঠের মধ্যে দিয়েই হাঁটতে শুরু করেন রাহুল। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে কৃষক-আন্দোলনের মূল কেন্দ্র পিপলিয়ামাণ্ডি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশ সীমানার নয়গাঁওতে একটি অতিথিশালায় আটকে রাখে। রাহুলের পরে মন্দসৌরে যেতে গিয়ে গ্রেফতার হন দিগ্বিজয় সিংহ ও কমল নাথ।
আরও পড়ুন:রাজ্যে রাজ্যে চাষিদের কোপে বেসামাল মোদী
রাহুল গ্রেফতার হওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক কংগ্রেস কর্মী জড়ো হন নয়গাঁওতে। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারী কৃষকদেরও অনেকে সেখানে পৌঁছলে উদ্বেগ বাড়ে প্রশাসনের। বিকেলেই রাহুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে ওখানেই নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
মোদী সরকারের একেবারে গোড়ার দিকে জমি অধিগ্রহণ আইনে সংশোধনের বিরোধিতা করে সাফল্য পেয়েছিল কংগ্রেস। এ বার কৃষকদের ঋণ মকুবের জন্যও একই ভাবে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন রাহুল। এ দিন মধ্যপ্রদেশ সরকার যে ভাবে আটক করার পরেও তাঁকে কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দিয়েছে, সেটাকে প্রাথমিক ভাবে জয় বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
এবং সেটা কিছুটা স্পষ্ট বিজেপির বক্তব্যেও। শিবরাজ ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ এ দিন বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা কুড়োতেই রাজ্যে অশান্তি বাড়াতে চাইছেন রাহুল। যা শুনে রাহুলের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দেশের কোন আইন বলে যে নিজেদের অধিকার চাইতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত চাষিদের পাশে দাঁড়ানোটা বেআইনি?’’