কৃষক আন্দোলনে মৃতদের স্মরণ। রবিবার সিংঘু সীমানায়। পিটিআই
অনেক সময়ই নৈতিক কর্তব্যের কাছে গৌণ হয়ে গিয়েছে শখ, বিনোদন।
স্ত্রীর জন্মদিনটা নেহাতই শখের বশে বিদেশেই কাটান হরিয়ানার লব সিংহ ঠাকুর। এ বছর কানাডায় ছুটি কাটাবেন বলে ঠিক করেছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু তা আর হল না। সৌজন্যে, দিল্লি সীমানায় চলতি কৃষক আন্দোলন। আন্দোলনরত কৃষকদের ‘সেবা’ করতে হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র থেকে তাঁর ‘ক্রেজ়ি বিউটি সেলুন’টাকে সিংঘু সীমানায় নিয়ে এসেছেন লব সিংহ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কৃষকদের কাছ থেকে একটি টাকাও নিচ্ছেন না তিনি। লব সিংহের কথায়, ‘‘কুরুক্ষেত্রে আমি ও আমার স্ত্রী মিলে একটি পার্লার-সেলুন চালাই। সেখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের অধিকাংশই কৃষক, হরিয়ানার বাসিন্দা। আমাকে অনেকেই বলেছিলেন, সিংঘু সীমানায় আমার যাওয়া উচিত। আমিও ভেবেছি, এই সময় সেটাই আমার কর্তব্য। তাই পুরো দলটাকে নিয়েই চলে এসেছি। আন্দোলনকারীদের থেকে একটি পয়সাও নিচ্ছি না। এক জন তো টাকা দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি।’’
জাতীয় সড়কে কৃষকদের অবস্থান-বিক্ষোভের মাঝেই জোরকদমে চলছে লব সিংহের কাজ। একটি ট্রাকের গায়ে বিশাল আয়না লাগিয়েছেন। তার সামনে তিনটি চেয়ার। চলছে চুল, দাড়ি কাটা, মাসাজ, চুলে কলপ সবই। লব সিংহ জানিয়েছেন, পঞ্জাব ছাড়া অন্যান্য রাজ্য থেকে যে সব কৃষক এসে আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন আসছেন তাঁর কাছে। লবের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর তিন কর্মচারী। সকলকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করতে হচ্ছে। লব সিংহ বলেন, ‘‘সেলুন-পার্লার বন্ধ করে এখানে এসেছি, কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে। যত দিন এই আন্দোলন চলবে, তত দিন এখানে থেকে কাজ করে যাব।’’
কিন্তু লব সিংহের মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা বিষাদ রয়েই গিয়েছে। সে কথা অবশ্য গোপন করেননি তিনি। জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝিই স্ত্রীর জন্মদিন গিয়েছে। ওই দিনটা স্ত্রীর পাশে থাকতে না-পারাটা তাঁর কাছে দুঃখের। লব সিংহের কথায়, ‘‘পার্লার-সেলুন তৈরি ও চালানোর পিছনে আমার স্ত্রী-র অনেক অবদান রয়েছে। কুরুক্ষেত্রে আমাদের দোকানে যাঁরা আসেন, আমার স্ত্রী তাঁদের চা খাওয়ান। আমার খেয়াল রাখেন। ওঁর জন্মদিনে, ওঁর অভাব বারবার অনুভব করেছি।’’
লব সিংহের সেলুন ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিংঘু সীমানায়। অনেকেই বলছেন, লব সিংহ সিংঘুতে আসায় তাঁদের অনেক সুবিধে হয়েছে। না-হলে চুল কাটাতে তাঁদের টাকা খরচ করে গ্রামে যেতে হত। আমন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘এত ভিড় যে চুল কাটাতে এসে তিন দিন ফিরে গিয়েছি। লব সিংহের এই উদ্যোগ সত্যি আমাদের উপকার করেছে।’’ শুধু আন্দোলকারীরাই নন, সিংঘুতে থাকা তাঁদের সন্তানদেরও চুল কাটানো হচ্ছে লব সিংহের সেলুনে।