খুনের ঘটনার পর আদালত চত্বরে ভিড়। ছবি: টুইটার থেকে
বিএসপি নেতা ও ভাগ্নেকে খুনে অভিযুক্ত আসামিকে ভরা আদালত কক্ষে বিচারক, আইনজীবীদের সামনেই গুলি করে খুন করল তিন জন। বিচারক তাঁর টেবিলের নীচে, আইনজীবীরা মেঝেয় শুয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচালেন। তবে এক আদালতকর্মী আহত হয়েছেন। পরে আদালত চত্বরে থাকা পুলিশ কর্মীরা তাড়া করে ওই তিন জনকে ধরে ফেলেন। যাঁকে খুনের অভিযোগে বিচার চলছিল, ধৃতদের মধ্যে তাঁর ছেলেও রয়েছেন। মঙ্গলবার ফিল্মি কায়দায় এই রোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর আদালতে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের মে মাসে উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) নেতা হাজি এহসান খান ও তাঁর ভাগ্নে খুন হন। সেই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে শাহনওয়াজ আনসারি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্ত শাহনওয়াজ দিল্লিতে আত্মসমর্পণ করেন। মঙ্গলবার তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল বিজনৌরের আদালতে। সেই শুনানি চলাকালীনই এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, আদালতে শুনানি চলছিল। বিচারকও তাঁর আসনেই ছিলেন। সেই সময় আচমকাই দর্শকাসনে বসে থাকা হাজি এহসানের ছেলে ও তাঁর দুই সঙ্গী রিভলভার বার করে শাহনওয়াজকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। আদালতকক্ষে থাকা এক আইনজীবী বলেন, ‘‘ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে যান সবাই। বিচারক চেয়ার থেকে নেমে টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়েন। আমার মতো অন্য আইনজীবীরাও মেঝেয় শুয়ে পড়েন। যতক্ষণ না পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করেছে, আমরা মেঝেয় শুয়েই ছিলাম।’’
ঘটনার সাক্ষী এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘দিল্লি পুলিশ শাহনওয়াজকে বিজনৌরে এনে আদালতে পেশ করে। হাজি এহসান খানের ছেলে এবং তাঁর দুই সঙ্গী আদালতের মধ্যেই শাহনওয়াজকে গুলি করে খুন করে। আমরা তাড়া করে তিন জনকেই ধরে ফেলি। আহত আদালতকর্মীকে হাসপাতালে পাঠাই।’’ পরে পুলিশ এসে শাহনওয়াজের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
হাজি এহসান খান উত্তরপ্রদেশের নাজিবাবাদ বিধানসভার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ভাগ্নেও দলীয় কর্মী ছিলেন। এ বছরের ২৯ মে মাসে দু’জনকে খুনের অভিযোগ ওঠে শাহনওয়াজের বিরুদ্ধে। যদিও পরে পুলিশ দাবি করে, রাজনৈতিক কারণে নয়, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরেই খুন হন দু’জন। কিন্তু সেই খুনের ‘বদলা’ যে এ ভাবে আদালত কক্ষের মধ্যে নিতে পারেন তাঁরই ছেলে বা অনুগামীরা, তার কোনও আঁচই পায়নি পুলিশ। অন্য দিকে এই ঘটনার পর আদালতের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কী ভাবে আদালত কক্ষের মধ্যে তিন তিন জন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়লেন, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।