জাতীয় স্তরে বিজেপি-র মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্ট গড়ে তোলার দিকে এখন নজর দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির মধ্যে বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব তাঁকে উদ্বেগে রাখছে। কারণ, ঘরোয়া কোন্দলে সমাজবাদী পার্টির মতো দল বিপর্যস্ত থাকলে বিজেপি মোকাবিলায় আঞ্চলিক দলগুলির একজোট হওয়ার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তৃণমূল নেত্রী মনে করছেন।
কালীঘাটে শনিবার দলের কোর কমিটির বৈঠকে বিজেপি মোকাবিলা নিয়ে সব চেয়ে বেশি শব্দ ব্যয় করেছিলেন মমতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিজেপি ক্রমেই ভয়ঙ্কর বিপদ হয়ে উঠছে। এ রাজ্যেও তারা বিভাজনের রাজনীতি করছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে। সতর্ক হয়ে এই রাজনীতির মোকাবিলা করতে হবে। জাতীয় স্তরেও বিজেপি-কে রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ ও আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রন্ট গড়তে হবে। কংগ্রেস এখন দুর্বল হলেও তাদের বাদ দিয়ে এমন ফ্রন্ট যে বাস্তবে সম্ভব নয়, তা-ও মেনে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
দলীয় সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গেই উত্তরপ্রদেশের ঘটনাবলির কথা তোলেন মমতা। বলেন, সমাজবাদী পার্টি বিজেপি-র মোকাবিলা করবে কী! নিজেরাই তো বাপ-ছেলে ঝগড়া করে মরছে!
তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদের কথায়, ‘‘বিহারে নীতীশ কুমার বেশ বুদ্ধিমানের মতো কাজ করছেন বলেই দলনেত্রী মনে করেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ, সমাজবাদী পরিবার এ ভাবে নিজেদের দ্বন্দ্বেই জর্জরিত থাকলে জাতীয় স্তরে বিজেপি মোকাবিলার কাজ ব্যাহত হবে।’’
উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি সরকার গড়ে ফেললে গোটা দেশেই তাদের রমরমা আরও বেড়ে যাবে।
উত্তরপ্রদেশে দল হিসাবে তৃণমূল বিরাট কোনও শক্তি, তা অবশ্য নয়। গত বার বিধানসভা নির্বাচনে বহু আসনে প্রার্থী দিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তাদের। মঠ এলাকা থেকে যিনি জিতে পরে তৃণমূলের মুখরক্ষা করেছিলেন, তাঁর জয় এসেছিল নিজস্ব প্রভাবেই। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার উদ্বেগ উত্তরপ্রদেশ কেন্দ্রিক নয়। ঘটনা হল, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছে তৃণমূল। জাতীয় স্তরে প্রাসঙ্গিক শক্তি হয়ে ওঠা মমতার বহু দিনের স্বপ্ন। নিজের রাজ্যে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তৃণমূল নেত্রী এখন চাইছেন লালু-নীতীশ-মুলায়মদের নিয়ে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে বিজেপি-কে চাপে ফেলার মতো রাজনৈতিক বলয় তৈরি করতে। মুলায়ম-অখিলেশ-রামগোপাল-শিবপালেরা অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকলে এই বলয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মমতা আশঙ্কা করছেন।
রাজ্যে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সিপিএম অবশ্য মনে করছে, তৃণমূল নেত্রীর উদ্বেগের কারণ অন্য। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এক জন নেতা বা নেত্রীর কথায় যে সব দল চলে, সেখানে কোনও না কোনও দিন এই রকমই ঘটে। মুলায়মের দলের বিবাদ দেখে তৃণমূল নেত্রীও আশঙ্কা করছেন, তিনি দুর্বল হয়ে পড়লে তাঁর তৃণমূল পরিবারেও বড়সড় কোন্দল বাধবে!’’