Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: নাম না করে রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ মমতার

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রাহুল পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মমতার সমালোচনা করেছিলেন। তখন রাহুলের নাম না করে ‘বসন্তের কোকিল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

মুম্বই শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

চাঁছাছোলা ভাষায় রাহুল গাঁধীকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শুধু নামটাই যা বললেন না। একেবারে চাঁছাছোলা ভাষায় রাহুল গাঁধীকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন তুললেন তাঁর ও কংগ্রেসের কর্মপন্থা নিয়ে।

Advertisement

আজ প্রথমে মুম্বইয়ের বিশিষ্টজন, পরে শিল্পপতিদের সামনে রাহুলকে কটাক্ষ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, কেউ যদি বিদেশে গিয়ে বসে থাকেন, রাস্তায় নেমে লড়াই না করেন, তা হলে বাকিরা কেন বিজেপির ‘টিআরপি’ বাড়তে দেবেন?’’ এবং জাতীয় রাজনীতির এই প্রশ্নেই মমতার মন্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস বাম সরকারের বিরুদ্ধে ঠিকমতো লড়াই করছিল না বলেই তিনি তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। এবং মানুষকে বলেছিলেন, তৃণমূলই প্রকৃত কংগ্রেস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাউকে তো বেড়ালের গলায় ঘন্টি বাঁধতে হবে।”

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গাঁধী পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মমতার সমালোচনা করেছিলেন। তখন রাহুলের নাম না করে ‘বসন্তের কোকিল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন মমতা। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস এবং শীর্ষ নেতৃত্বকে ক্রমাগত খোঁচা দিলেও রাহুলকে মমতার এ ভাবে কটাক্ষ এই প্রথম। নাম না করলেও রাহুলকে নিশানা করে মমতা আজ বলেন, “আপনি যদি বেশির ভাগ সময় বিদেশে বসে থাকেন, মাঝে মাঝে মাঠে নামেন, তা হলে আপনি কি ভাবেন, মানুষ বোকা?” বিশিষ্টজন, শিল্পপতিদের সামনে দু’বার একই কথা বলার পর, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের পাশে দাঁড়িয়েও মমতা বলেন, “শরদ পওয়ার বলেছেন, মজবুত বিকল্প শক্তি দরকার। যারা লড়াই করবে। কেউ যদি লড়াই না করে আমরা কী করব?” তবে কংগ্রেসের অনেকেই ঘরোয়া ভাবে বলছেন, এত দিন কংগ্রেসের জি-২৩ গোষ্ঠীর বিক্ষুব্ধ নেতারাও যে কথা বলতে পারেননি, মমতা সেটাই বলে দিয়েছেন।

Advertisement

কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছে না বলে মমতা এত দিন কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা করছিলেন। কার্যত কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির জোটের কথাও তিনি বলেছেন। গোয়া, মেঘালয়ে কংগ্রেসেই ভাঙন ধরিয়েছে তৃণমূল। অধীর চৌধুরীর মতো কংগ্রেস নেতারা তাই বারবার অভিযোগ তুলেছেন, মমতা আসলে বিজেপির হয়ে কংগ্রেস তথা বিরোধী জোটে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। আজ মুম্বইয়ে বিশিষ্টজন ও শিল্পপতিরাও তৃণমূলনেত্রীকে প্রশ্ন করেছেন, তিনি কি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিকল্প জোটের কথা ভাবছেন? বিজেপি বিরোধী সব ভোট এককাট্টা না হলে বিজেপিকে কী ভাবে হারানো সম্ভব?

মমতা জবাবে বলেছেন, তিনি গত ৬-৭ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন। কংগ্রেস যেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে ঠিকমতো লড়াই করছে না, সেখানেই তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে। যেমন, ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়। মমতা বলেন, গোয়ায় গত নির্বাচনে মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। বিজেপি সরকার তৈরি করেছে। তিনি কেন কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন, তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব, “আমি করিনি। ওঁরা যেখানে শক্তিশালী, সেখানে লড়াই করুন। আমি কোথাও ভোট ভাগ করতে যাচ্ছি না।” মমতার যুক্তি, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বলেই তৃণমূল সেখানে ভোট ভাগাভাগি করতে যাচ্ছে না। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “কংগ্রেস কেন আমাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে লড়ছে? সিপিএম কেন লড়ছে? ওরা তো পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।”

প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেসের জোট ক্ষমতায়। সেই জোটের সূত্রধর শরদ পওয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা ইউএপি-র অস্তিত্বই নেই বলে মন্তব্য করায় রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা অস্বস্তিতে পড়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলের কটাক্ষ, “বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে অহঙ্কার নয়, ঐক্য প্রয়োজন।” কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মমতা এ সব বলে রাহুলের বদলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। তাই মুম্বইয়ে এসে তিনি নিজের উদ্যোগে শিল্পমহল, বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। এবং মমতার ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরাই মুম্বইয়ে শিল্পমহলের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। জাভেদ আখতারও আজ বলেছেন, মমতাই মুম্বইয়ে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের শাসক জোটে অস্বস্তি আরও বাড়াতে বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়র মন্তব্য, “মমতা তো পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে কংগ্রেসকে বাসের চাকার সামনে ছুড়ে ফেললেন। ইউপিএ-কে মৃত ঘোষণা করলেন। এই অপমানের পরেও কোনও দল জোটে থাকত না। কিন্তু কংগ্রেস মহারাষ্ট্রের শাসক জোটে থেকে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement