মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’-র পাশে ‘ভারত’ কথাটি বিকল্প হিসাবে রাখা শুরু হলে কী করবে বিজেপি? স্কুলপাঠ্যে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি বদলে ‘ভারত’ করার জন্য এনসিইআরটি-র বিশেষজ্ঞ কমিটি যে সুপারিশ করেছে, সেই প্রসঙ্গে আজ এই মর্মে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সাংবাদিক বৈঠকে মমতার দাবি, বিরোধী জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিজেপি ভয় পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সব বদলে দিচ্ছে। ইন্ডিয়ার বদলে ভারত করে দিচ্ছে। ইতিহাস বদলে দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যবই বদলে দিচ্ছে। কে এই এনসিআরটি? এদের কাজ কী? এ সব সরকারেরই অংশ। পুজোর মধ্যে বলে দিল, ইন্ডিয়া কেটে ভারত করো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইন্ডিয়ার সঙ্গে ভারতও থাকবে।” সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, “ইন্ডিয়া কাটো, ভারত করো। কেন? এত ভয় কীসের? আমরা ইন্ডিয়া নাম নিয়েছি বলে? কাল যদি আমরা আমাদের নামে ভারত যোগ করি তাহলে আবার বদলাবে?”
সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের স্কুলপাঠ্য বই জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে পরিমার্জন করার উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ বা এনসিইআরটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। তার চেয়ারপার্সন ইতিহাসবিদ সি আই আইজ়্যাক বেশ কিছু সুপারিশের কথা সদ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। যাতে ‘ইন্ডিয়া’ বদলে ‘ভারত’ বা ‘প্রাচীন ইতিহাস’ বদলে ‘ধ্রুপদী ইতিহাস’ করা ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধে ‘হিন্দুদের বিজয়’-এ গুরুত্ব দেওয়ার মতো নানা কথা বলা হয়েছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র শরিকেরা। এনসিইআরটি-র দাবি, বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সুপারিশের সপক্ষে বিজেপি নেতৃত্বের বিবৃতি আসতে শুরু করেছে।
আইজ়্যাক সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সঙ্ঘের চিন্তক-শিবির ভারতীয় বিচার কেন্দ্রের উপ-সভাপতি ছিলেন তিনি। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এই এনসিইআরটি যারা চালাচ্ছে, তারা আরএসএসের লোক। ভারতবর্ষের ইতিহাসকে বিকৃত করতে হবে। মোদী ও আরএসএসের তত্ত্বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে হবে। তাই অতীতকে ভুলিয়ে দাও।’’ বিহারের জেডিইউ মন্ত্রী অশোক চৌধরি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘দেশের নাম কী হওয়া উচিত, এনসিইআরটি কোন অধিকারে তা ঠিক করতে চায়? প্রধানমন্ত্রী যদি ‘ভারত’ চান, তা হলে সাহস থাকে তো সংসদে বিল আনুন। পিছনের দরজা থেকে কাজ করবেন না।’’
কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি বলেছেন, ‘‘সংবিধানে যেমন বলা রয়েছে, সেই অনুযায়ী ‘ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারত’ ব্যবহার করতে পারা দেশবাসীর অধিকার। শুধু ‘ভারত’ ব্যবহারের কথা যে বলা হচ্ছে, তার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। কেরল এই সঙ্কীর্ণ রাজনীতি মেনে নেবে না। ‘ইতিহাসের বিকৃতি’ মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও এনসিইআরটি কিছু বিষয় পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ায় কেরল তা আলাদা করে পড়াতে শুরু করেছে। এনসিইআরটি অসাংবিধানিক বা অবৈজ্ঞানিক কিছু পড়ুয়াদের শেখাতে চাইলে তত্ত্বগত বিতর্কের পরিসর থেকেই তার বিরোধিতা করা হবে বলে বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ বিদেশিরা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভারতই বলে থাকি।’’ ভারত শব্দটি আরও বেশি করে ব্যবহৃত হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংবিধানে দু’টি শব্দই রয়েছে। তাতে সংশোধনী আনার সুপারিশ কেউ করছে না।’’ বিজেপি নেতা তরুণ চুঘ বলেছেন, ‘‘আমাদের ডিএনএ-তে ‘ভারত’ আছে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’’ উত্তরাখণ্ডের বিজেপির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিংহ ধামী বলেছেন, ‘‘ভারত কথাটা আমাদের গর্বের।’’